চাকচিক্য দমাতে পারেনি বাঁশ-বেতের কদর

0
63
বাঁশ-বেতের আধুনিক ফার্নিচার

এক সময় কাঠের ফার্নিচারের কদর থাকলেও বাজারে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রভাবে স্থানীয় ফার্নিচার ব্যবসায় মান্দা ভাব দেখা দিয়েছে। নিত্য নতুন ডিজাইন আর চকচকে রঙের আঁচড়ে মানুষের নজর কাড়ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আসবাবপত্র।

কিন্তু সময়ের দাবিতে ব্যতিক্রম মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বড়চেগ গ্রামের আমির হোসেন সিরাজ। তিনি নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন বাঁশ-বেতের আধুনিক ফার্নিচারের কারখানা। বড় বড় স্থানীয় ফার্নিচারের দোকান যখন ব্র্যান্ডের ফার্নিচারের কাছে হার মানছে তখন গ্রাম থেকেই তিনি সারা দেশে বিক্রি করছেন তার তৈরি বাঁশ-বেতের ফার্নিচার।

২০০৩ সালে ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মাত্র একজন শ্রমিক দিয়ে শুরু কারখানা শুরু করেন সিরাজ। এখন সেখানে কাজ করেন ১৫ জন শ্রমিক। নাম দিয়েছেন ‘সিরাজ কুটির শিল্প’।

তার এই ফার্নিচার সারাদেশে যেমন যাচ্ছে তেমনি সারা দেশে তার পরিচিতিও এনে দিয়েছে। করোনার কারণে গত বছর থেকে ব্যবসা একটু খারাপ যাচ্ছে তবে স্বাভাবিক সময়ে এত অগ্রীম অর্ডার থাকে যে দিনরাত শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। বছরে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার ফার্নিচার বিক্রি করেন তিনি।

নিজ উদ্যোগ এবং সাফল্য নিয়ে আমির হোসেন সিরাজ জানান, এক সময় মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়ে এই ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে কর্মচারীদের বেতনসহ আনুসাঙ্গিক খরচ প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা। যেখানে দেড় লাখ টাকা মাসে খরচ হচ্ছে নিশ্চয়ই আমার আয়ও সেভাবেই হচ্ছে যেটা উল্লেখ করতে চাচ্ছি না।

তিনি বলেন, আমি নার্সারির ব্যবসা করতাম, কিন্তু ১৯৯৮ সালে আমার ধারণা হলো নিজের ঘরের জন্য বাঁশ-বেত দিয়ে কিছু ফার্নিচার তৈরি করব। যখন তৈরি করলাম অনেকেই নিতে চাইলেন। আস্তে আস্তে বাড়িতে শুরু করলাম এবং সামান্য লাভে বিক্রি করতাম। পরে চিন্তা করলাম বাণিজ্যিকভাবে শুরু করি।

এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কুরিয়ারের মাধ্যমে গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে যায় আমার ফার্নিচার। অনেকেই আমার কাছ থেকে নিয়ে অনলাইনে বিক্রি করেন। কেউ কেউ আবার বিদেশেও পাঠান। বিদেশে এর প্রচুর চাহিদা আছে। একজন কাতার প্রবাসী আমার থেকে প্রচুর মাল নেন যেগুলো তিনি কাতারে বিক্রি করেন।

মোটামুটি সব ধরনের জিনিস এখানে তৈরি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, বাঁশের তৈরি আধুনিক ডিজাইনের খাট, ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, ফুলের টব, সোফাসেট, রিডিং টেবিল, আলনা, ড্রেসিং টেবিল, টেবিল ল্যাম্প, পেন স্ট্যান্ড, হোটেল-রেস্টুরেন্ট-অফিসের ফার্নিচারসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের চাহিদা বেশি। এইগুলো তৈরি করার জন্য উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে তিনি এবং কর্মচারীরা বাঁশ-বেত সংগ্রহ করেন। বাঁশ সংগ্রহ করতে পারাই বড় চ্যালেঞ্জ।

আমির হোসেন সিরাজ বলেন, তিনি কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজে যেমন শুরু করেছিলেন আজও কারও সাহায্য পাচ্ছেন না। কর্মসংস্থান ব্যংকে কয়েকবার গেছেন কিন্তু তারা বলে ফান্ড নেই। সাহায্য পাননি সরকারের তরফ থেকেও। এসব ফার্নিচার তৈরি করতে যথেষ্ট পুঁজিরও প্রয়োজন রয়েছে। বাঁশ, বেত, মেডিসিন কিনতে হয়। তাছাড়া ঘরভাড়া, কারেন্ট বিলসহ আনুষাঙ্গিক খরচতো আছেই। স্বল্প পুঁজি নিয়ে শিল্প টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন।

গত বছর করোনার প্রভাবে আর্থিক বড় ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধ ছিল। ফলে পণ্য পাঠাতে পারিনি। আবার তখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাঁশও সংগ্রহ করতে পারিনি। কিন্তু কর্মচারীদের বেতন ঠিকই দিতে হয়েছে। সে সময় যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি তা এখনও ঠিক করতে পারিনি। সরকার এত কিছুতে সাহায্য করেছে কিন্তু আমি চেষ্টা করেও পাইনি। যদি সরকার থেকে সাহায্য পাই তাহলে বড় আকারে নতুন করে সাজাতে পারব। সঠিক গাইড পেলে সারাদেশের পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করতে পারব।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক জানান, সিরাজ কখনো সহযোগিতার জন্য আবেদন করেননি। হয়ত তিনি জানেন না কিভাবে করতে হয়। আমরা যোগাযোগ করে সরকারের সুযোগ সুবিধাগুলো তাকে পাইয়ে দেব এবং এই শিল্পকে আরও কিভাবে বিস্তার ঘটানো যায় তা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন কাজ করবে।