
দুপুর আড়াইটা। মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। দুপুরের রোদটা সামান্য কমলেই স্মৃতিসৌধের পেছনের মাঠে ক্রিকেট খেলবে বলে কয়েক কিশোরের অপেক্ষা। বধ্যভূমির গেটের সামনে শাহাদাত মিয়ার ঝালমুড়ির দোকান। শাহাদাত মিয়ার ৯ বছরের মেয়ে বিউটি বাবার সঙ্গে ঝালমুড়ি বিক্রি করছে।
দূর থেকে নীল রঙের পিকআপ ভ্যান দেখে ‘১ টাকার ভাইয়ারা খাবার নিয়ে আইছে রে’ বলে চিৎকার দিয়ে এক দৌড়ে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল। চোখের পলকেই স্মৃতিসৌধের প্রবেশপথে জড়ো হলো কয়েকশ শিশু-কিশোর। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পিকআপ ভ্যান দেখে শিশু-কিশোরদের মতোই অসংখ্য ছিন্নমূল মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যায় এক প্যাকেট খাবারের আশায়।
এভাবেই প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ বেশকিছু জেলায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে তারা ১ টাকায় আহার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংস্থার অনুদানে ৯ বছর ধরে চলছে তাদের এমন কার্যক্রম। ঢাকার ১২টির বেশি স্থানে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে ১ টাকায় খাবার তুলে দেয় বিদ্যানন্দ। এজন্য তারা মিরপুর ও কেরানীগঞ্জে রান্নাঘর স্থাপন করেছে।
‘পড়বো, খেলবো, শিখবো’ স্লোগানে ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন কিশোর কুমার দাস। শুরুতে শুধু নারায়ণগঞ্জে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করে সংগঠনটি। এরপর করোনাকালে সেবামূলক কার্যক্রম ও ঢাকা সিটি নির্বাচনের ব্যবহৃত পোস্টার দিয়ে লেখার খাতা বানিয়ে সবার নজর কাড়ে সংগঠনটি।
বিদ্যানন্দের হেড অব কমিউনিকেশনস সালমান খান ইয়ামিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৬ সালের ১৫ জুন থেকে ১ টাকায় আহারের কার্যক্রম শুরু হয়। রাজধানীতে আমাদের দুটি রান্নাঘর আছে। তবে কেরানীগঞ্জের মতো বড় রান্নাঘর একটাই। মিরপুর আর কেরানীগঞ্জের দুটো রান্নাঘরে রান্না হচ্ছে এখন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে খাবার দেয়া হয়। স্থানগুলো নির্ধারিত নয়। তবে প্রায় ১২টির বেশি স্থানে আমরা খাবার দেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্য কোনো সংগঠন খাবার দিলে কিংবা যদি দেখি কোনো স্পটে খাবার দেয়ার প্রয়োজন নেই, সেখানে আমরা খাবার দেই না। আমরা সাধারণত ভাসমান লোকদের খাবার দেই। রাতে ফেরিওয়ালার মতো আমরা ঘুরে ঘুরে ছিন্নমূলদের খাবার দেই।’
১ টাকায় আহারের ফেসবুক পাতায় বলা হয়েছে, ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সফলতম প্রজেক্ট এটি। কাজটি খুব সিম্পল। প্রতিদিন দুই হাজার জনের রান্না হয় ভাড়া করা রান্নাঘরে, স্বেচ্ছাসেবক এবং নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা রান্না করে সে খাবার নিয়ে ছোটেন স্কুলে স্কুলে কিংবা প্রত্যন্ত কোনো গ্রামে, নির্দিষ্ট রুটিনে। এক টাকার বিনিময়ে যে কোনো দুস্থ মানুষ কিনে নিতে পারেন এই খাবার। ভাত-ডাল-সবজিতে ভরা থাকে একেকটি বক্স।’
সংগঠনটির পরিচালনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এ প্রজেক্টটি পরিচালিত হয় কিছু প্রবাসী এবং প্রতিষ্ঠিত চাকরিজীবীর অর্থায়নে। এটি কার্যকর করেন স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মকর্তারা। মিডিয়া কিংবা সেলেব্রিটি নিয়ে হইচই করা হয় না।… মাসিক কিংবা এককালীন টাকা দিয়ে আপনিও নিতে পারেন অনেকের খাবারের দায়িত্ব কিংবা কিনে দিতে পারেন চাল-ডাল-আলু-তেল, স্বেচ্ছাশ্রম দিতে পারেন খাবার বিতরণে।’