বাংলাদেশে বিবাহ এবং তালাক নিবন্ধনের জন্য সরকারি ওয়েবসাইট থাকা সত্ত্বেও এর কার্যকরী ভূমিকা নেই। এটি দেশের পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক।
বিবাহ এবং তালাকের নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো থাকা সত্ত্বেও, এই প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত না হওয়ায় রমরমা ব্যবসা হয়ে উঠেছে। এই কারণে, সমাজে একদিকে যেমন বিয়ে ও তালাকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, তেমনই অপর দিকে পরিবারের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই অনিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা দেশে বিয়ে করে প্রবাসে যাওয়ার পর তাদের স্ত্রীরা অনেক সময় পরকীয়া এবং অন্যান্য অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি স্বামীর পাঠানো অর্থ এবং সম্পদ নিয়ে তারা প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ফলে প্রবাসীরা মানসিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
অনেক নারী সমাজের উচ্চপদস্থ পুরুষদের টার্গেট করে তাদের অর্থ ও সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে বিয়ের প্রলোভন দেখান। এমনকি চাকরি হারানো পর্যন্ত গড়ায় এই ধরণের প্রতারণার পরিসর। এর ফলে অনেক পুরুষ একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েন, যার প্রভাব পড়ে তার পরিবারের উপরেও।
দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের কাজী অফিসে নির্দিষ্ট রুম বরাদ্দ দিয়ে, সেখানে জন্ম ও মৃত্যু সনদের মতো বিবাহ এবং তালাকের নিবন্ধনের ডিজিটাল কার্যক্রম চালু করা উচিত। এতে করে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর হবে।
আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি আলাদা “বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন” অধিদপ্তর গঠন করা প্রয়োজন। এই অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সুষ্ঠু এবং কার্যকরীভাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া পরিচালিত হতে পারে। এতে করে বিবাহ এবং তালাকের অনিয়ম ও দুর্নীতি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে।
দেশের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে এই সমস্যার প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে এবং সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে যাতে বিবাহ ও তালাক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বাংলাদেশের বিবাহ এবং তালাক নিবন্ধনের প্রক্রিয়া আরও সুশৃঙ্খল ও স্বচ্ছ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রবাসীদের এবং অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমাজে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সরকারের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।