চাচাতো বোনকে গোপনে বিয়ে করে খুন সৌরভ, ৩ জন গ্রেপ্তার

0
100
গ্রেপ্তার
চাচাতো বোনকে গোপনে বিয়ে করে খুন সৌরভ, ৩ জন গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহ সদর ও মুক্তাগাছা সীমান্ত এলাকায় সেতুর নিচ থেকে দুই পা ও মাথা বিচ্ছিন্ন একটি মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর লাশ গুম  করার কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কারও উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহত শিক্ষার্থীর নাম ওমর ফারুক সৌরভ (২৩)। সৌরভ গুলশানের বেসরকারি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারাটি গ্রামে। তার বাবার নাম ইউসুফ আলী। তিনি চাকরি করেন ডাক বিভাগে। মা মাহমুদা আক্তার পারুল গৃহিণী। তার পরিবার স্থায়ীভাবে ঢাকায় মতিঝিলে বসবাস করেন।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সৌরভ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন এবং মূল হত্যাকারীসহ সহযোগীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আরও পড়ুনঃ ট্রলি ব্যাগে মিলল পা-মাথা বিচ্ছিন্ন মরদেহ

সংবাদ সম্মেলনে ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভূঞা (বিপিএম, পিপিএম) বলেন, তিন বছর আগে ওমর ফারুক সৌরভের চাচাতো বোন ইসরাত জাহান ইভার বিয়ে হয় আব্রাহামের সঙ্গে। তিনি বর্তমানে কানাডায় পড়াশোনা করছেন। তার সঙ্গে ডিভোর্সও হয়নি ইভার।

কিন্তু সৌরভ গোপনে তার চাচাতো বোন ইভাকে বিয়ে করে। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি ইভার পরিবার। গত ১ জুন সৌরভ ময়মনসিংহে আসে আব্রাহামের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে। বিষয়টি জেনে ক্ষিপ্ত হন ইভার বাবা।

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর ইলিয়াস তার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মৃদুলকে দিয়ে সৌরভকে ফোন করে বাসায় ডেকে আনেন। আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পারি, পরিকল্পনা অনুযায়ী গোয়ালকান্দিতে চাচার বাসায় ইলিয়াস ও তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে সৌরভকে হত্যা করে। এরপর লাশ বাথরুমে ফেলে রাখা হয়।

পরবর্তীতে চাপাতি দিয়ে দেহ থেকে মাথা আলাদা করা হয়। আমরা ওই দিনই লাগেজের দোকানের সন্ধান পাই। সেই দোকানের সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। ফুটেজে আমরা দেখতে পাই ১ জুন রাত ৮টার দিকে ইলিয়াস এবং ফারুক দুইজনই ওই দোকানে লাগেজ কিনতে যায়। আমরা সেই ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানতে পারি তারাই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

এরপর ডিবি এবং আমাদের কোতোয়ালি থানা যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে সোমবার রাতে ফারুককে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মূল আসামি ইলিয়াসকে নেত্রকোণার ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। লাশ গুম করতে ব্যবহৃত গাড়িটিও জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রাইভেটকারের চালককে। প্রাথমিকভাবে তারা এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, ইলিয়াস সাবেক সেনাসদস্য। সে লাশের পরিচয় যেন কেউ শনাক্ত করতে না পারে, সে জন্য দুই হাতের আঙুলের চামড়া তুলে ফেলেছিল।

গত ২ জুন সকালে ময়মনসিংহ সদরের সীমান্তবর্তী মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদী থেকে সৌরভের চার টুকরো করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সুতিয়া নদী থেকে কালো রঙের একটি ট্রলিব্যাগ থেকে তিন টুকরো এবং পাশেই একটি বাজারের ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় মাথা উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ৩ জুন রাতে গ্রামের বাড়িতে ওমর ফারুকের মরদেহ দাফন করা হয়।