গোপালগঞ্জে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় নিহত ব্যক্তির লাশ নিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন নিহতের স্বজন সহ বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীরা।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় নিহত মো. ওয়াসিকুর রহমান ভূঁইয়ার লাশ নিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের চেচানিয়াকান্দি নামক এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন স্থানীয়রা। এসময় তারা গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং আগুন জ্বালিয়ে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
বুধবার (১৫ মে) দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালিত হয়। পরে জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মাহবুবুল আলম এবং জেলা পুলিশ সুপার আল-বেলী আফিফা দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক থেকে একেক করে সরে যায়।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১৪ মে) রাতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী জয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান ভূইয়া লুটুল ও পরাজিত প্রার্থী বিএম লিয়াকত আলী ভূইয়ার সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়।
সে সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন পরাজিত বিএম লিয়াকত আলী ভূইয়ার সমর্থক মো. ওসিকুর ভুইয়া (২৫)। এছাড়াও আহত হন অন্তত ৬ জন। তাদেরকে ঢাকা, খুলনা ও গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ওই ঘটনায় বুধবার (১৫ মে) বেলা ১১ টার দিকে নিহত ওয়াসিকুর রহমান ভূইয়ার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় লোকজন। পরে তারা মিছিল করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের চেচানিয়াকান্দিতে যান। বিক্ষোভ সমাবেশে চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের কয়েক হাজার লোক অংশ নেন।
দুপুর ১২ টার দিকে তারা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে অবস্থান নেন। তারা হামলার ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেন বিক্ষোভকারীরা এসময় মহাসড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে মোতায়েন ছিলো পুলিশ, বিজিবি,সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম ও পুলিশ সুপার আল-বেলি আফিফা দোষিদের বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে এক ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষোভকারীরা।
এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুল আলম কাকন, দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক, উপ-প্রচার সম্পাদক শিমুল চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী বিএম লিয়াকত আলী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর মোঃ আলিমুজ্জামান বিটু, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি শেখ সাহাবুদ্দিন হিটু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা, সদর উপজেলা আ.লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ছবেদ আলী ভূঁইয়া, পৌর কাউন্সিলর আল-আমিন, পৌর কাউন্সিলর আল আমিন সিকদার কুটু, প্রিন্স, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর মোঃ শরিফুল সিকদার, পৌর কাউন্সিলর রনি হোসেন কালু, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জায়েদ মাহামুদ বাপ্পি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক বলেন, যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। আমরা প্রত্যাশা করছি, প্রশাসন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিবে।
গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার আল-বেলী আফিফা বলেন, অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। দোষীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে আশ্বস্ত করলে তারা অবরোধ তুলে নিয়েছেন। আমরা ইতোমধ্যেই হত্যার বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। এ ঘটনায় এখন পযর্ন্ত মামলা না হলেও আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। স্বচ্ছভাবে ফলাফলা ঘোষণা করা হয়েছে। দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান কম ছিলো। আমাদের দেশে একটা কালচার আছে নির্বাচনে পরাজিত হলে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন তোলা হয়।
তিনি আরো বলেন, জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, আনসার ব্যাটালিয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। অবৈধ কোনো অস্ত্র ব্যবহার হলে তা উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে। এদিকে এঘটনায় চন্দ্রদিঘলিয়া এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ আবু বাক্কার