
পবিত্র লাইলাতুল কদর। মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও রহমত লাভের রজনী লাইলাতুল কদর। আজ সারারাত ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে পালন করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এই রজনী।
এ রাত এত সম্মানিত যে, এক হাজার মাস ইবাদত করলেও যে সওয়াব হতে পারে, তার চেয়ে লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সওয়াব অনেক বেশি। যে বেশির পরিমাণ একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। রমজান মাসের শেষ দশ রজনী লাইলাতুল কদর সন্ধান করা হয়।
লাইলাতুল কদরের ফজিলত বোঝানোর জন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ‘কদর’ নামে আলাদা একটি সুরা নাজিল করেছেন।
একবার নবিজি (সা.) সাহাবিদের সম্মুখে বনি ইসরাইলের জনৈক চারজন লোক সম্পর্কে আলোচনা করলেন যে, তারা দীর্ঘ হায়াত লাভ করে অধিককাল ধরে ইবাদত করেছেন। এ সময়ের মধ্যে তারা একটিও নাফরমানি করেননি।
নবিজি (সা.) এর পবিত্র জবান থেকে এ কথা শুনতে পেরে সাহাবায়ে কেরাম অত্যন্ত বিস্মিত হলেন এবং নিজেদের ব্যাপারে আফসোস করতে লাগলেন। সাহাবায়ে কেরামের এ আফসোসের পরিপ্রেক্ষিতে মহান রাব্বুল আলামিন হজরত জিবরাঈলের (আ.) মাধ্যমে নবিজি (সা.) এর কাছে এমন সময় এ সুরায়ে ‘কদর’ অবতীর্ণ করেন। (তাফসিরে মাজহারি)।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি একে (কুরআনকে) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আপনি কী জানেন? লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটি নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সুরা আল কাদর : ১-৫)
‘নিশ্চয় আমি তা (কুরআন) এক মোবারক রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।’ (সুরা আদ দুখান: ১-৪) এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদির মেয়াদ ও পরিমাণ নির্দিষ্ট করে তা সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাদের লিখে দেওয়া হয়।
নবিজি (সা.) বলেন, ‘যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও, তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে ইবাদত করো।’ যদি কেউ ইমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের খাঁটি নিয়তে লাইলাতুল কদর কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে, তবে তার পূর্ববর্তী সব গোনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (বুখারি)
লাইলাতুল কদরের ফজিলত অপরিসীম। তাই সারা রাত জাগরণ করে সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা কর্তব্য। বেশি বেশি নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সালাতুস তাসবিহ, কাজা নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, দান-সাদকা, জিকির-আসকার, তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইসতেগফার, দুয়া-দুরুদসহ নফল আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়া একান্ত জরুরি।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি একবার নবিজিকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি কদরের রাত সম্পর্কে অবহিত হতে পারি, তবে আমি কী করব? তখন রাসুল (সা.) আমাকে এ দোয়া পাঠ করার জন্য বললেন। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’ (তিরমিজি)
যে লোক শবেকদর থেকে বঞ্চিত হয়, সে যেন সমগ্র কল্যাণ থেকে পরিপূর্ণ বঞ্চিত হলো। যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল, কিন্তু ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতে পারল না, তার মতো হতভাগা দুনিয়ায় আর কেউ নেই। কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায়, সেজন্য রাসুল (সা.) শেষ দশ দিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফরত থাকতেন। (মুসলিম)
লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নেই। অনেকেই মনে করেন, ২৭ রমজানই লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট রাত। কারণ নবিজি (সা.) কখনো বলেননি, ২৭ রমজানের রাতই কদরের রাত। তবে ২১ থেকে ২৯ রমজান পর্যন্ত বেজোড় যে কোনো রাতই শবেকদর হতে পারে।
লাইলাতুল কদরের তারিখের ব্যাপারে নবিজি (সা.) বলেন, আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে, অতঃপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর খোঁজ করো। (বুখারি)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা শবেকদরকে রমজানের ৯ রাত বাকি থাকতে অথবা সাত রাত বাকি থাকতে অথবা পাঁচ রাত বাকি থাকতে অথবা তিন রাত বাকি থাকতে অথবা রমজানের শেষ রাতে (অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ রমজানের রাতে) তালাশ করবে। (তিরমিজি)।
২১ থেকে ২৯ রমজান পর্যন্ত বেজোড় যে কোনো রাতেই শবেকদর হতে পারে। শবেকদরের সম্ভাব্য রাতগুলোর মধ্যে আর মাত্র দুটি রাত আমাদের হাতে রয়েছে। আজ রমজানের ২৭তম রাতে হাজার বছরের চেয়ে দামি সৌভাগ্যের সময়টুকু অর্জনে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শুক্রবার আলাদা বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে মহিমান্বিত রজনী পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ এ রাতকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম হিসেবে ঘোষণা করেছেন। মানুষের ক্ষণস্থায়ী জীবনে হাজার মাসের চেয়েও বেশি ইবাদতের পুণ্য লাভের সুযোগ এনে দেয় এ রাত।’
দেশ ও মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা প্রধানমন্ত্রীর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শবেকদর রজনিতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।
লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে এক বাণীতে তিনি দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান।