“নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী আজীবন সম্মাননা” পেয়েছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ঋত্বিক নাট্যপ্রাণ জনাব লিয়াকত আলী লাকী।
বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন স্বাধীনতা ও একুশে পদক প্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মঞ্চসারথি আতাউর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যগুরু আমানুল হক। এছাড়াও বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মীনু হক এবং সাধারণ সম্পাদক সাজু আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচনা পর্বে উপস্থিত গুনীজনরা ঋত্বিক নাট্যপ্রাণ জনাব লিয়াকত আলী লাকীর বহুমুখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের প্রসংশা করে বলেন, শিল্পের প্রতিটি শাখায় তার অবাধ বিচরণ এবং উৎকর্ষ সাধনে তিনি অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশের সকল শিল্পের শিল্পীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি গণজাগরণের শিল্প আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। “শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষমতায়ন গণজাগরণের শিল্প আন্দোলন” এই রুপকল্প নিয়ে সারাদেশের শিল্পীদের ঐক্যবদ্ধ করে শিল্প-সংস্কৃতিঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে।
তারা আরো বলেন – স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বর্তমান সাংস্কৃতিক গণজাগরণ তৈরীতে অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছেন লিয়াকত আলী লাকী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকেও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এরপর আজীবন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান, প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চসারথি আতাউর রহমান, নৃত্যগুরু আমানুল হক, নৃত্যপরিচালক এবং বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মীনু হক, নৃত্যপরিচালক সাজু আহমেদ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, একুশে পদকপ্রাপ্ত ঋত্বিক নাট্যজন জনাব লিয়াকত আলী লাকীকে উত্তরীয় পরিয়ে “নৃত্যাচার্য বুলবুল আজীবন সম্মাননা স্মারক” প্রদান করেন।
নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী, কালজয়ী এক নৃত্যশিল্পী যিনি বাংলাদেশের নৃত্য জগতের পথিকৃৎ। তাঁর ১০৫ তম জন্মদিনকে ঘিরে ৩রা ফেব্রুয়ারি ২০২৪ গত শনিবার “বঙ্গবন্ধুর সংস্কৃতি-ভাবনা” শীর্ষক বুলবুল চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা এবং “বুলবুল আজীবন সম্মাননা স্মারক” প্রদানের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান শেষে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ নৃত্যানুষ্ঠান। সালাম বাংলাদেশ, জয়ও তব বিচিত্র আনন্দ, মেঘের ডমরু, পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, লিলাবালী লিলাবালী, শ্যামকে আনো দেখি, সৃজন ছন্দেসহ মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশিত হয়। এছাড়াও জনাব লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় জয়দেব পালিত এর নৃত্য নির্মিতিতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা অবলম্বনে “বীরপুরুষ” পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা এবকাডেমির শিশু নৃত্যদল।
নানামুখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে লিয়াকত আলী লাকী
জনাব লিয়াকত আলী লাকী একাধারে একজন নাট্যাভিনেতা, নাট্য নির্দেশক, সংগীত শিল্পী, সুরকার, সাংস্কৃতিক সংগঠক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান পুরুষ। গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন, শিশু নাট্য আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বাংলা নাটককে বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম অগ্রপথিক লিয়াকত আলী লাকী।
তাঁর নির্দেশিত নাটকের সংখ্যা ৮৫টি, তাঁর অভিনীত নাটক ৬৫ টি এবং ১০ টি নাটক রচনা, অনুবাদ ও নাট্যরুপ দিয়েছেন।
২০১২ সাল থেকে সহস্রাধিক নাটক মঞ্চায়ন করেছেন জনাব লিয়াকত আলী লাকী। প্রতিবছর ৬৪ জেলায় মুক্তিযুদ্ধের নাটক, দ্রোহ ও মুজিব নাটক, মূল্যবোধের নাটক, সাহিত্য নির্ভর নাটক, ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাটক, প্রতি জেলায় যাত্রা প্রযোজনা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক, গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার, চিরায়ত বাংলা নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে ব্যাপক নাট্যযজ্ঞ পরিচালনা করেছেন তিনি।
৬৪ জেলাকে শিল্পের শহর ঘোষণা দিয়ে শিল্প আণ্দোলন পরিচালনা, বটতলা কেন্দ্রীক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে, শিশু-কিশোর ও তরুণদের নিয়ে সারাদেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন পরিচালনা এবং গণজাগরণের শিল্প আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের সকল স্তরের শিল্পীদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে নানামুখী সাংস্কৃতিক আন্দোলন পরিচালনা করেছেন তিনি।
শিল্পের আলোয় মুক্তিযুদ্ধ, শিল্পর আলোয় বঙ্গবন্ধু, শিল্পের আলোয় ভাষা আন্দোলন, শিল্পের আলোয় বঙ্গকন্যা বিষয়ে শিল্পকে পরিচালিত করে চলেছেন জনাব লিয়াকত আলী লাকী। মহামারি করোনার বিরুদ্ধে শিল্প, গণজাগরণের শিল্প আন্দোলন পরিচালনা করেছেন তিনি।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানান সম্মাননায় ভূষিত জনাব লিয়াকত আলী
এর আগেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানান সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন জনাব লিয়াকত আলী। বাংলাদেশের প্রায় অর্ধশত শিশু সংগঠন কর্তৃক “শিশুবন্ধু”ও শ্রেষ্ঠ শিশু সংগঠক পদক লাভ করেছেন ঋদ্ধিমান নাট্যব্যক্তিত্ব লিয়াকত আলী লাকী। শিল্পগুরু ঋদ্ধিমান, ঋত্বিক নাট্যপ্রাণ, শিশুবন্ধু ও শিল্পবন্ধু খেতাবে ভুষিত হয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি ভারতের নাট্য সংগঠন সুখচর পঞ্চম প্রদত্ত “জীবন কৃতি সম্মান” পেয়েছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, গুণীজন জনাব লিয়াকত আলী লাকী। বাংলা নাটককে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এবং বাংলাদেশে নাটকের প্রকাশকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছেন। পাশাপাশি শিশু নাটককে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরিসরে ভিন্নমাত্রা প্রদান করার নিরলস প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি স্বরূপ সুখচর পঞ্চম খ্যাতিমান অভিনেতা, নির্দেশক, সংগঠক, গণসঙ্গীত শিল্পী ও নাট্যব্যক্তি লিয়াকত আলী লাকীকে তাদের জীবন কৃতি সম্মান প্রদান করছে। শ্রেষ্ঠ শিশু সংগঠক হিসেবে এর আগেও কলকাতা থেকে “সমলয়” পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে “বাংলার মুখ” পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রথিতযশা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিনয়ে ২০১৯ সালে একুশে পদক এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলোশিপ ২০২০ লাভ করেছেন তিনি।
২০০৪ সালে জাপানের তইয়ামা’র গভর্নর কর্তৃক Honorary Cultural Envoy of Japan গ্রহণ করেন।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণ পদক লাভ করেন। এছাড়াও আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং সম্মেলনে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্তৃক নানামাত্রিক পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন গুণী এই সাংস্কৃতিক সংগঠক।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান, পিপলস থিয়েটার এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি জেনারেল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সহ-সভাপতি, আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত আছেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক জনাব লিয়াকত আলী লাকী।