ঈদুল আজহার ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনায়, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ৩১২টি দুর্ঘটনায় ৩৪০ জন নিহত ও ৫৬৯ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার (৮ জুলাই) নগরীর বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ‘ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ ২০২৩’ প্রকাশকালে এ তথ্য তুলে ধরেন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী এবার ঈদযাত্রায় দেশের সড়ক মহাসড়কে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত ও ৫৪৪ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি দীর্ঘ এক দশক ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
এবারের ঈদে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষের কম যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৪ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো ছিল।
ঈদের ছুটি ১দিন বাড়ানোর সুফল মিলেছে। দেশে ঈদযাত্রায় মোট যাতায়াতের প্রায় ৮ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারির কারণে এবারের ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। কিছু কিছু সড়কের অবস্থা ভালো হওয়ায় এই সকল রুটে ভোগান্তি কমার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা ১৫.১৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৩৩.১১ শতাংশ কমেছে।
ঈদযাত্রা শুরুর দিন ২২ জুন থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ৬ জুলাই পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত ৫৪৪ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২২ সালের ঈদুল আজহায় যাতায়াতের সাথে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১৫.১৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৩৩.১১ শতাংশ, আহত ৪২.২৭ শতাংশ কমেছে।
উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ২৫টি ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ১০টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, আহত ১৫ জন ও ৬ জন নিখোঁজ হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ দুর্ঘটনার শীর্ষে মোটরসাইকেলের অবস্থান থাকলেও এবারের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পশুবাহী যানবাহনের ব্যাপক চলাচল ও ঈদযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ট্রাক-পিকআপ-কভার্ডভ্যানের অবাধ চলাচলের কারণে এবারের ঈদে দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে ট্রাক-পিকআপ-কভার্ডভ্যান।
এবারের ঈদে ৮৮টি ট্রাক-পিকআপ-কভার্ডভ্যান দুর্ঘটনায় ৯৩ জন নিহত, ১৯৩ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩১.৭৬ শতাংশ, নিহতের ৩১.১০ শতাংশ এবং আহতের ৩৫.৪৪ শতাংশ প্রায়। এর সাথে পাল্লা দিয়ে ৯১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৪ জন নিহত ও ৭৭ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২.৮৫ শতাংশ, মোট নিহতের ৩১.৪৩ শতাংশ, মোট আহতের ১৪.১৫ শতাংশ।
এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় ৮২ জন চালক, ৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩৫ জন পথচারী, ৪৭ জন নারী, ২৫টি শিশু, ১৭ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৪ জন শিক্ষক, ৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নিহত হওয়ার পরিচয় মিলেছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৬.৪৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৯.২৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৯.৬০ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংঘঠিত মোট দুর্ঘটনার ১.৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে সংঘঠিত হয়েছে।