করতোয়া নদীর পূর্ব পাড়ে বড়শশী ইউনিয়নে বদেশ্বরী মন্দিরে নতুন বউ নিয়ে মহালয়া অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হিমালয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার ৩ দিন পর বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দুর্ঘটনাস্থল আউলিয়া ঘাটের পাশ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দল।
পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বিকেলে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে আমাদের ডুবুরি দল। উদ্ধারকৃত যুবক ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। পরে স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করলে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হিমালয়ের বাড়ি বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের খালপাড়া এলাকায়। তিনি ওই এলাকার বীরেন্দ্র নাথ ও সারদা রানী দম্পতির একমাত্র ছেলে। গত ৩ আগস্ট পার্শ্ববর্তী ঝলইশালশিরি ইউনিয়নের বড়ুয়াপাড়া এলাকার রবীন চন্দ্র রায়ের মেয়ে বন্যার সঙ্গে বিয়ে হয় হিমালয়ের। বন্যা এবার এইচএসসি পাস করেছেন।
জানা গেছে, স্ত্রী বন্যাকে নিয়ে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে নানা পরিকল্পনা করেছিল হিমালয়। ইচ্ছে ছিল মহালয়ার অনুষ্ঠান দেখে ফেরার পথে করবেন পূজার কেনাকাটা। বাড়ি থেকে বের হয়ে মহালয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার সময় হিমালয়সহ তাদের আট স্বজন নৌকাডুবির কবলে পড়েন।
এ ঘটনায় মারা গেছেন হিমালয়ের মামি শিমলা রানী, মাসি সফলতা রানী ও মাসতুতো বোন আঁখি রানী। নদী থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও বুধবার বিকেল পর্যন্ত নিখোঁজ ছিলেন হিমালয়। নৌকাডুবির সময় উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে উদ্ধারকারী নৌকায় উঠেছিলেন হিমালয়ের স্ত্রী বন্যা রানী, তবে হাত আকড়ে রাখতে পারেননি স্বামীকে।
ওই ঘটনার তিন দিন পর মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হলো হিমালয়কে। স্বামীকে হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ হয়ে শয্যাশায়ী বন্যা রানী। বার বার স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছিলেন তিনি, ফিরে পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মৃত। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হিমালয়ের মা-বাবা।
অপরদিকে ঘটনার দিন থেকে হিমালয়ের খোঁজে করতোয়ার পাশে অপেক্ষা করেছিলেন দুলাভাই গ্রী বাবু। অপেক্ষার প্রহর শেষে শ্যালকের মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।
গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আউলিয়া ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন ২৫ জন, দ্বিতীয় দিন ২৬ জন ও তৃতীয় দিন ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।