হাইড্রোজেন পার অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ যার সংকেত H2O2। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটি বর্ণহীন তরল। এটিকে অক্সিডাইজিং এজেন্ট বলা হয়ে থাকে। এর স্ফুটনাংক ১৫০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা পানির চেয়ে ৫০ ডিগ্রি বেশি। হাইড্রোজেন পারক্সাইড উত্তপ্ত বা তাপীয় সংস্পর্শে এলে বিস্ফোরকের ন্যায় আচরণ করে। তাই এটিকে অন্ধকার ও শীতল স্থানে রাখা হয়।
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এর ব্যাবহারঃ
হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড সংক্রমণনাশক। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে কাজ করে। ১৯২০ সাল থেকে এটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইডে অতিরিক্ত একটি অক্সিজেন থাকে।
ল্যাবরেটরিতে ব্লিচিং এজেন্ট, জীবাণুনাশক, অক্সিডাইজার হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং প্লাস্টিক শিল্পেও এর ব্যবহার রয়েছে ব্যাপক। এছাড়া বাথরুম পরিস্কার, কাপড় ধোয়াসহ বিভিন্ন পন্যে ব্যবহার করা হয় এটি। উচ্চ ঘনত্বের হাইড্রোজেন পারক্সাইড রকেট এবং সাবমেরিনগুলির জন্য একটি শক্তির উৎস।
গৃহস্থলির কাজে এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ৩% ঘনত্বের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ৩ শতাংশ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দ্রবণ ঔষধ হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
কখন বিপদজনক?
হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নিজে জ্বলে না কিন্তু এটি আগুনের তীব্রতা বাড়াতে সাহায্য করে। কোথাও যদি রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে আগুন লাগে তবে পানি দিয়ে নেভানো সম্ভব নয়। বরং এতে আগুনের মাত্রা আরও বাড়ে। রাসায়নিকের কারণে লাগা আগুন নেভাতে হয় ফগ সিস্টেমে। কিংবা ব্যবহার করা হয় ফোম কিংবা ড্রাই পাউডার জাতীয় অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র।
ক্ষতিকর দিকগুলোঃ
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ব্যাকটেরিয়া ধংস করতে সক্ষম তাই এটি দাঁতের চিকিৎসকরা ব্যবহার করে থাকেন। এই পদার্থটি গিলে ফেললে বা শ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে বিচ্ছিন্নভাবে জ্বালাতন করতে পারে। আরও হতে পারে বমি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, অবশ, ফুসফুস সংকুচিত হওয়া, কম্পন, মানসিক আঘাত।চোখে লাগলে স্বল্প মেয়াদী জ্বালাতন করতে পারে। ফলাফলগুলো ভয়ঙ্কর রুপ নিতে পারে আবার অন্ধত্বের কারণ ও হতে পারে। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এতটাই শক্তিশালী কেমিক্যাল যে এটি ফুসফুসে পৌঁছলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমতে পারে। এমনকী লং টার্ম ড্যামেজ হতে পারে।
সীতাকুণ্ডে আগুন নেভাতে বাংলাদেশে ফায়ার সার্ভিস টিমের নয়জন নিহত কেন?
ফায়ার সার্ভিসের মতে, চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে ভুল তথ্যের কারণে ‘ভুল টিম’ পাঠিয়েছিল তারা। আগুন লাগার ১২ ঘণ্টা পরও কোন কনটেইনারে কী আছে, সে সম্পর্কে ধারণা ছিল না ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের।
সেখানে পর্যাপ্ত পরিমানে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাসায়নিক থাকার কারণে সেখানে এতো বড় বিস্ফোরণ ঘটেছিল। ঘটনার শুরুতে জানা যায় সেখানে গার্মেন্টস পণ্য রয়েছে। সেই হিসেবে কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে যান।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, কেমিক্যালসহ রাসায়নিক বিস্ফোরণের মতো ঘটনা মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত একটি বিশেষ হ্যাজমাট (বিপজ্জনক উপাদান) টিম রয়েছে। এ টিমের সদস্য সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০ জন। সঠিক তথ্য না পাওয়ায় ওই টিমের সদস্যদের পাঠায়নি ফায়ার সার্ভিস। ফলাফল হিসেবে বাহিনীর ১২ সদস্যকে হারাতে হয়েছে। নয়জনের মরদেহ মিললেও এখনও নিখোঁজ তিনজন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন ১৫ ফায়ার ফাইটার।
সীতাকুণ্ডের ঘটনায় সর্বোচ্চ নয়জন নিহত এবং তিনজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। নিহত ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা হলেন- মো. রানা মিয়া, মনিরুজ্জামান, আলাউদ্দিন, মো. শাকিল তরফদার, মিঠু দেওয়ান, রমজানুল ইসলাম, নিপন চাকমা, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মো. ইমরান হোসেন মজুমদার। নিখোঁজ তিন সদস্য হলেন- শফিউল ইসলাম, রবিউল ইসলাম ও ফরিদুজ্জামান।