সৌদির সরকারি তেল গুদামে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

0
69
সৌদির সরকারি তেল গুদামে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
সৌদির সরকারি তেল গুদামে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল উত্তোলন ও সরবরাহ কোম্পানি আরামকোর তেলের গুদামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। হামলার পর গুদামের দু’টি ট্যাংকে আগুন ধরে গেলেও হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

শুক্রবার সৌদিআরবের রাজধানী জেদ্দায় এই হামলা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। ইতোমধ্যে হুথি বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে হামলার দায় স্বীকার করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার পর লোহিত সাগরের তীরবর্তী শহর জেদ্দার আকাশে কালো ধোঁয়ার কুন্ডুলি দেখা যাচ্ছিল।

চলতি সপ্তাহের রোববার জেদ্দায় ফর্মুলা ওয়ান মোটর রেসিং টুর্নামেন্ট ‘সৌদি আরাবিয়ান গ্রান্ড প্রিক্স’ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই রেসের সার্কিট থেকে ঘন কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল বলে রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক জানিয়েছেন।

যদিও সৌদিআরবের সরকারের দাবি, তেলের গুদামে আগুন লাগার পর শুক্রবারেই তা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে, কিন্তু দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যম এখবারিয়া টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভ ফুটেজে দেখা গেছে, ওই এলাকায় এখনও আগুন জ্বলছে।

এ হামলার বিষয়ে আরামকো কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করেনি. তবে সৌদির জ্বলানি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই হামলার কারণে যদি বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ে, সেক্ষেত্রে সৌদি আরব তার দায় নেবে না।

হুথি বিদ্রোহীদের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও অত্যাধুনিক ড্রোন সরবরাহ করার জন্য ইরানকে দায়ী করেছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। তবে তেহরান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

হুথিদের মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারেয়া রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শুক্রবার তারা জেদ্দায় আরামকোর স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র এবং রাস তানুরা ও রাবিঘ তেল শোধনাগারে ড্রোন হামলা চালিয়েছেন। সৌদিআরবের রাজধানী রিয়াদের ‘গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও’ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

হামলার এ তথ্য স্বীকার করে এক প্রতিবেদনে সৌদিআরবের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা এসপিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি সেনাবাহিনী হুথিদের অনেগুলো ড্রোন ও রকেট হামলা ব্যর্থ করে দিয়েছে। এছাড়া দেশটির বন্দরনগরী জিজান লক্ষ্য করে ছোড়া একটি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ধ্বংস করেছে সৌদির ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থা।

সম্প্রতি সৌদি আরবের তেল স্থাপনাগুলোতে হামলা জোরদার করেছে ইরানের মিত্র হুতিরা। রমজান মাসের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ধরনের হামলা চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী, চলতি বছর রমজান মাসে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য যখন জাতিসংঘ চেষ্টা করছে, সে সময়েই ঘটল এ হামলা।

শুক্রবারের হামলার জবাবে শনিবার ভোররাতে ইয়েমেনে হামলা চালিয়েছে সৌদি জোট বাহিনী। বৈশ্বিক জ্বালানি উৎস ও সরবরাহ ব্যবস্থা রক্ষার লক্ষ্যেই পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে সৌদি জোট।

শনিবারের এ হামলায় হুতিদের নিয়ন্ত্রিণে থাকা ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও লোহিত সাগরীর বন্দরশহর হোদেইদাহের ‘হুমকির উৎস এলাকাগুলোতে’ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জোট বাহিনী।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন মিত্র সৌদি আরবের ওপর চালানো হামলার নিন্দা করেছেন এবং ইয়েমেনের সংঘাতের একটি টেকসই সমাধানের জন্য কাজ করার পাশাপাশি রিয়াদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শক্তিশালী করতে সহায়তা করে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

জেদ্দায় হামলা হলেও গ্রান্ড প্রিক্স পরিকল্পনা অনুযায়ীই এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ফর্মুলা ওয়ানের প্রধান নির্বাহী ইতালীয় নাগরিক স্তেফানো ডোমিনিকালি।

গত রোববার হুতি হামলায় সৌদি আরবের একটি তেল শোধনাগারের উৎপাদন সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়েছিল ও একটি পেট্রলিয়াম পণ্যের বিতরণ টার্মিনালে আগুন ধরে গিয়েছিল। ১১ মার্চ হুতিরা রিয়াদের একটি তেল শোধনাগারেও হামলা চালিয়েছিল, তাতে ছোটখাটো একটি অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল।