বিশ্বব্যাংক প্রায় ৪ কোটি নগরবাসীর কল্যাণে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং ভবিষ্যত মহামারী মোকাবেলায় প্রস্তুতির লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে জোরদার করতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য ৩০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে।
স্থানীয় সরকার কোভিড-১৯ রেসপন্স এন্ড রিকভারি প্রজেক্ট মহামারীতে কার্যকরভাবে সাড়া দিতে এবং মহামারী থেকে কাটিয়ে ওঠতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা প্রদান করবে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মোট ৩২৯টি পৌরসভা এবং ১০টি সিটি করপোরেশন প্রকল্প থেকে দ্বি-বার্ষিক ভিত্তিতে অর্থ পাবে। এই প্রকল্পের অধীনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নগর সেবাদান স্থাপনা ও অবকাঠামো, স্থানীয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং জলবায়ু প্রভাব, দুর্যোগ ও ভবিষ্যতের রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলার প্রস্তুতি ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো হবে।
প্রকল্পটি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজে নিয়োজিত এবং করোনা বিধিনিষেধ ও লকডাউন আরোপের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও দুস্থ লোকেদের জীবিকা পুনরুদ্ধার করতে শ্রমঘন গণপূর্ত কাজে সহায়তা প্রদান করবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের দায়িত্বে নিয়োজিত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারী শহরাঞ্চলের দরিদ্র জনগণকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে, আয়ের ক্ষতি করেছে এবং মৌলিক সেবা ব্যাহত করেছে।
তিনি আরো বলেন, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলো করোনা মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে ওঠতে শহুরে দরিদ্রদের সহায়তার পাশাপাশি শহরগুলোকে ভবিষ্যতের ধাক্কা সামলানোর জন্য প্রস্তুত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি সিটি করপোরেশন এবং শহরগুলোকে আরো ভালোভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে এবং করোনা মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ এবং রোগের প্রাদুর্ভাবসহ ভবিষ্যতের দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করবে।
প্রকল্পের অর্থে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠনগুলো কমিউনিটি হাত ধোয়ার স্থান এবং টয়লেট স্থাপন করবে এবং পৌরসভার মালিকানাধীন বা পরিচালিত বাজার, কবরস্থান ও পাবলিক অফিসে স্যানিটাইজেশন উন্নত করবে।
প্রকল্পটি বাসিন্দাদের পৌরসভা-চালিত স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলোতে আরো ভালো সুফল পেতে এবং সুবিধাবঞ্চিত লোকদের জন্য টিকা নিবন্ধন সহজতর করতে এবং কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যবিধি, টিকা ও জলবায়ু ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করতে সহায়তা করবে।
এ প্রকল্প পাবলিক ওয়ার্ক স্কিমের অধীনে ১০ হাজার নারীর জন্য ১.৫ মিলিয়ন দিবস অস্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরি করবে। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে জলবায়ু প্রভাব, দুর্যোগ এবং ভবিষ্যতে রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য প্রস্তুতি উন্নত করতে সহায়তা করবে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র আরবান ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট এবং প্রকল্পের টাস্ক টিম লিডার শেনহুয়া ওয়াং বলেন, করোনা মহামারীর কারণে শহুরে দরিদ্রদের সংখ্যা ২৭ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটি শ্রমঘন গণপূর্ত কাজ ও কর্মসূচি এবং রক্ষণাবেক্ষণ স্কিম পরিচালনা করবে যা একদিকে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, নিষ্কাশন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো নিম্ন আয়ের অঞ্চল, বস্তি এবং রোগের প্রাদুর্ভাব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং দুর্যোগের ঝুঁকির সম্মুখীন এলাকাগুলোতে পৌঁছে দেবে এবং অন্যদিকে দরিদ্র শহুরে মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করবে।
প্রকল্পটি প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে আরো ভালো সমন্বয় ও তথ্য বিনিময়ের জন্য একটি ওয়েব-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করবে। বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট এই আটটি বিভাগেই এটি বাস্তবায়িত হবে।