সিইসিকে ‘খলনায়ক’ আখ্যা দিয়ে পাল্টা জবাব

0
85
সিইসিকে ‘খলনায়ক’ আখ্যা দিয়ে পাল্টা জবাব
সিইসিকে ‘খলনায়ক’ আখ্যা দিয়ে পাল্টা জবাব

বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে ‘খলনায়ক’ আখ্যা দিয়ে পাল্টা জাবাব দিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তার মতো লোককে সিইসি নিয়োগ দেওয়াকেও দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

আজ শনিবার (২৯ জানুয়ারি) অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সিইসির দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে সুজন এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে ড. তোফায়েল আহম্মেদ, এম হাফিজউদ্দীন খান, ড. শাহদীন মালিক, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, দিলীপ কুমার সরকারসহ সুজনের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে কোন প্রক্রিয়ায় ড. শামসুল হুদা কমিশন সুজনকে কাজ দিয়েছিল- জানতে চাইলে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা ট্যাকনিক্যাল বিষয়। আমি ট্যাকনিক্যাল পদ্ধতি জানি না। আদালতের রায় আছে যে প্রার্থীদের (হলফনামা) তথ্য প্রচার করতে হবে। তখন তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদা কমিশন এই কাজে আমাদের সহায়তা নিয়েছিল। আমরা জানি না, যেহেতু টেকনিক্যাল বিষয়, সুতরাং তারাই বলতে পারবেন কোন প্রক্রিয়ায় কাজ দিয়েছিলেন।

কোনো বিজ্ঞপ্তি বা কোনো দরপত্র ছাড়াই সুজনকে নির্বাচনি তথ্য প্রচারে কাজ দেওয়া হয়েছিল বলেও সম্প্রতি অভিযোগ তোলেন সিইসি কেএম নূরুল হুদা। এমনকি তিনি কোন প্রক্রিয়ায় কাজ দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্নও করেন।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, সিইসির বক্তব্যে কেবল আমার নয়, সুজনের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন, সবার মানহানি হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে মানহানি মামলা করব কি না, পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা অনেক। রাতকে দিন আর দিনকে রাত করা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা সব কাজ করতে পারে। আদালতের রায় আছে- নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ ওঠলে ইসি তদন্ত করতে পারে। তদন্তে সেই অভিযোগ প্রমাণ হলে নির্বাচন বাতিল করতে পারে। কিন্তু তারা কোনোটাই করেনি।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, দলগুলো আদালতে যায়নি বলে সিইসি অজুহাত দেখিয়েছেন। কিন্তু ৭০টির মতো মামলা হয়েছে। একটিওর শুনানি হয়নি। ব্যালটপেপার খুললে মধ্যরাতে ভোট হয়েছে প্রমাণ হতো। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) প্রিজাইডিং কর্মকর্তার হাতে ব্যালট ইউনিটে ২৫ শতাংশ ব্যালট পেপার ওপেন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এমন অনিয়মের বিষয়ও উঠে এসেছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, এ রকম একজন ‘খলনায়ককে’ সিইসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ড. শাহদীন মালিক বলেন, সমালোচনা এড়িয়ে যাওয়ার নিকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে ব্যক্তি আক্রমণ। সিইসির বক্তব্য অপ্রত্যাশিত।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, একজন বিদায়ের সময় ভুল ভ্রান্তি নিয়ে মাফ চায়, সুন্দরভাবে বিদায় নেয়। কিন্তু তিনি উল্টোটা করেছেন। সুজন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া কাজ করায় কারও ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার হয়নি। সেই কমিশন অনেক বিল সরাসরি তারাই দিয়েছে। যে বই ছাপানো হয়েছে, সেটির বিলও প্রথমা প্রকাশনীকে তারাই সরাসরি দিয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যৌক্তিক সমালোচনার উপযুক্ত জবাব না থাকলে সমালোচকের চরিত্র হননের অপচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া বহুল ব্যবহৃত একটি অপকৌশল। ঠিক এমনই এক অপকৌশল ব্যবহারের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা।

প্রসঙ্গ, গত ২৭ জানুয়ারি রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমাক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত ‘আরএফইডি টক উইথ কে এম নূরুল হুদা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগসহ কিছু কুরুচিপূর্ণ, অশালীন, অসত্য বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।

সুজন সম্পাদক বলেন, দেশের মর্যাদাপূর্ণ একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে বসে তাকে এমন মিথ্যাচার করতে দেখে আমরা হতবাক। তার এই মিথ্যাচারের প্রতিবাদেই আমাদেরএই সংবাদ সম্মেলন।

প্রথমত, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ড. বদিউল আলম মজুমদারের ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং কোনদিন ছিলও না। তিনি কমিশন থেকে কখনও কোনো কাজ নেননি, অসমাপ্ত রাখার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।

২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের সময় হলফনামায় বর্ণিত প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ, প্রার্থীদের ভোটারদের মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজনের কাজটি করার জন্য ড. শামসুল হুদা কমিশন ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত এসইএমবি প্রকল্প থেকে সুজনকে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা দেয়। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় একই ধরনের কাজের জন্য সুজনকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

অর্থাৎ দুটি নির্বাচনে সর্বমোট ১২ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা সুজন নির্বাচন কমিশন থেকে পায়। অথচ ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে সিইসি কে এম নূরুল এক কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আপত্তিকর এবং মানহানিকর মন্তব্য করায় সিইসির ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও মনে করেন।

বদিউল আলম মজুমদারের উদ্দেশ্যে নূরুল হুদা বলেন, আমি যখন কুমিল্লার ডিসি ছিলাম, তখন থেকে তার সঙ্গে পরিচয়। সেই সুবাধে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দেখা করতে চাইলেন। বললাম, আমি তো এখন ব্যস্ত। এরপর টেলিফোনে, বাসায়, এখানে-ওখানে সবসময় তিনি দেখা করা কথা বলতেন। একদিন একেবারে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে দেখা করলাম। তিনি হাফিজ সাহেব ও আলিম সাহেবসহ ১০-১৫ জন লোক নিয়ে এলেন।

একটা বড় বই দেখিয়ে বললেন, এই কাজটা আমরা করেছি। বললেন, প্রার্থীদের হলফনামা সংগ্রহ করে আমরা ছাপিয়েছি। বারবার বলেন, আমি শামসুল হুদা কমিশনের সময় কাজ করেছি। উনারা যাওয়ার পর কর্মকর্তারা জানালেন উনার বিরুদ্ধে প্রায় ১ কোটি টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে।

কাজ না করেই টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে। তারপরে কমিশন সভায় তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে। এরপর আমি সাবধান হয়ে গেলাম। এরপর তিনি ছাড়েন না, বারবার টেলিফোন করেন, সাক্ষাৎ করতে চান। বারবার বলেন, ড. শামসুল হুদা কমিশনের সময় প্রচুর কাজ করেছি।

এরমধ্যে গেলাম শ্রীলংকায়, কলম্বোয়। সেখানে তারাও গেছেন। ওখানেও বারবার একই কথা বলেছেন। আমি বললাম, এই কাজ (হলনামা বই আকারে প্রকাশ) করা কী দরকার? এটা তো কোনো কাজ হইল না। কতগুলা কাগজ এখানে (কমিশনে) থাকে, আপনারা ছাপিয়ে দিলেন। এটা তো ওয়েবসাইটে আছে। এটা নিয়ে বই করার তো কিছু দেখতেছি না। আমি তো মনে করি ঝালমুড়ির ঠোঙা বানানো ছাড়া এটার কোনো কাজ নাই।

তারপর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কী ক্যাপাসিটিতে, কিভাবে কাজ পেয়েছিলেন কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল? তিনি বললেন, না। আমরা তো এমনিই কাজ পেয়েছিলাম। সে সময় আমি তাকে বললাম, আপনি তো নির্বাচন বিশেষজ্ঞ নন।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ নন, তাহলে কোন যোগ্যতায় নেবো আপনাকে। একটা বই তৈরি করবেন এজন্য তো আপনাকে নেওয়ার প্রয়োজন নাই। আমি তো মনে করি না নির্বাচন কমিশনের কোনো প্রয়োজন আছে আপনার সার্ভিস নেওয়া। এভাবে দু’বছর তিনি আমার পেছনে ঘুরঘুর করেছেন।

আরেকদিন আমার অফিসে এলেন। তাকে বললাম, যে সময় আপনি কাজ করেছেন, সে সময় আর এখনকার সময় এক না। তখন ছিল সেনা সমর্থিত সরকার। এখন কাজ দিতে হলে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। আরও দশ জনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। এভাবে তো আপনি কাজ পাবেন না। তারপর তিনি রাগটাগ করে চলে গেলেন। এরপর থেকেই যখন সুযোগ পান সমালোচনা করেন। নানা কথাবার্তা বলেন।

সিইসি বলেন, তিনি খুব দ্রুত সংবাদ সম্মেলন করার অভিজ্ঞ লোক। নির্বাচনী কাজের বিশেষজ্ঞ তো তিনি নন।