কোন অজুহাত নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খুলে দেয়ার আহ্বান

0
74
কোন অজুহাত নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খুলে দেয়ার আহ্বান
কোন অজুহাত নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খুলে দেয়ার আহ্বান

স্কুল খোলা রাখুন। স্কুলগুলো পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ থাকার কারণে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৬১ কোটি ৬০ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত। কোভিড-১৯-এর ওমিক্রন ধরনটি সারা বিশ্বে যখন ছড়িয়ে পড়ছে, এটি যাতে শিশুদের পড়াশোনাকে ব্যাহত করতে না পারে, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে আমরা সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে ইউনিসেফের নির্বাহী প্রধান বলেন, ‘সংকটের মুহূর্তে অনেক সময় আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ২০২০ সালে যখন করোনা মহামারি শুরু হলো সে সময় স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তও সেরকম একটি কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল।’

‘কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের জন্য চড়া মূল্য আমাদের দিতে হয়েছে। আমাদের অবশ্যই শিশুদেরকে স্কুলে ধরে রাখতে হবে এবং বিশ্বের সব দেশের সরকারকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি- কোনো অজুহাতেই যেন শিক্ষা কার্যক্রমে ছেদ না পড়ে।’

‘তার পরিবর্তে বরং আমদের এমন দৃঢ় ও কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে প্রতিটি শিশুর স্কুলে আসা নিশ্চিত হয়। প্রত্যেক কমিউনিটিতে এমন কিছু শিশু থাকে, যারা আর্থিক, মানসিক ও বিভিন্ন কারণে স্কুলে আসতে পারে না, আমদের উচিত হবে সেইসব শিশুকেও স্কুলে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।’

বিবৃতিতে হেনরিয়েটা আরও বলেছেন, মহামারি প্রতিরোধে স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবশ্যই টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা উচিত কিন্তু এই বিষয়টি যেন স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামক হয়ে না ওঠে সে বিষয়েও সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি

পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিপর্যয় এড়াতে এবং শিশুদের তাদের শেখার পথে ফিরিয়ে আনতে ইউনিসেফের সুপারিশগুলো হলঃ

  • শিক্ষক ও স্কুলকর্মীদের অবিলম্বে টিকা দিতে হবে। প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মী ও উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে কোভিড-১৯-এর টিকাদানের পরপরই এই টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক ও স্কুলকর্মীদের সম্পূর্ণরূপে সমর্থন ও অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।

স্কুল খোলা রাখুন। স্কুলগুলো পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ থাকার কারণে বর্তমানে প্রায় ৬১ কোটি ৬০ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত।

আমরা জানি, কোভিড-১৯ ঝুঁকি প্রশমনের ব্যবস্থাগুলোই স্কুলগুলোকে খোলা রাখতে সাহায্য করে। আমরা আরও জানি, ডিজিটাল সংযুক্তির পেছনে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলেই কোনো শিশু পেছনে পড়ে থাকবে না। প্রতিটি শিশুকে স্কুলে ফিরিয়ে আনতে আমাদের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি কমিউনিটির প্রান্তিক শিশুদের ওপর বিশেষ লক্ষ্য রেখে কিছু বিষয়ে বিস্তৃত সহায়তা প্রদান করা। যেমন শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া, মানসিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসহায়তা, সুরক্ষা ও অন্যান্য পরিষেবা প্রদান।

  • অগ্রাধিকারপ্রাপ্য জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি সুরক্ষিত করার পর এবং টিকার যথেষ্ট প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে ইউনিসেফ শিশুদের টিকাদানকে সমর্থন করে। সশরীরে স্কুলে যাওয়ার জন্য টিকাদানকে পূর্বশর্ত করবেন না। কোভিড-১৯ টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে সশরীরে স্কুলে যাওয়ার শর্ত আরোপ করলে তা শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ না পাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইউনিসেফ শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের টিকাদান ছাড়াই স্কুলগুলো খোলা রাখার এবং কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কৌশল যাতে পড়াশোনা ও সামাজিক জীবনের অন্যান্য দিকে শিশুদের অংশগ্রহণকে সহজতর করে, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করে।
  • সংকটময় পরিস্থিতিতে সব সময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বজুড়ে শিক্ষাব্যবস্থায় যে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, তা আমরা স্বীকার করি। তবে এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি খুবই বেশি। শিশুদের স্কুলে রাখার জন্য সম্মিলিতভাবে আমাদের পক্ষে সম্ভব সবকিছু করতে হবে।