বিশ্বে ১৮০টি দেশের মধ্যে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এক ধাপ এগিয়ে ১৩তম হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থা থেকে প্রকাশিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)’-এ এ তথ্য উঠে এসেছে। এর আগে অবস্থান ছিল ১২তম।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গতবার (২০২০ সালের পরিস্থিতি বিবেচনায়) এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম। এবার বাংলাদেশের ১ ধাপ উন্নতি হয়েছে, তাতে অধঃক্রম (খারাপ থেকে ভালো) অনুযায়ী ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৩তম। তবে স্কোর গতবারের মতোই ২৬ রয়েছে। টানা তিন বছর এই স্কোরে আটকে আছে বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশের সমান স্কোর করেছে মাদাগাস্কার ও মোজাম্বিক।
বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের ২০২১ সালের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) ১৪৭ নম্বরে।
বাংলাদেশের এই অবস্থানকে খুবই হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি জানান, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৮টি জরিপের ফলাফল থেকে সূচকটি নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাকালে দুর্নীতির ব্যাপকতা দেখা গেছে। বিশেষ করে বিগত দিনে স্বাস্থ্য খাতে খুবই খারাপ নজির দেখতে পেয়েছি। দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতাকে নিজেদের সম্পদ গড়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। ফলে দুর্নীতি প্রতিরোধের কোনো সুফল মেলেনি। হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের শাস্তির মুখোমুখি করা যাচ্ছে না। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। দুদকও সেক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে। মিডিয়া এবং সুশীল সমাজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকোচিত হচ্ছে। গত দুই বছর এই প্রবণতা বেড়েছে। ফলে দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণের অংশগ্রহণ কমেছে। তাই দুর্নীতির সূচকে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্বে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৩তম
দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও তা বাস্তবায়ন হয় না উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডকে রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। শুধুমাত্র চার বছরের হিসাবে নয়, বিগত ১০ বছরের পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই হতাশাজনক। আমরা একই জায়গায় অবস্থান করছি। এটা বিব্রতকর ও উদ্বেগজনক।
প্রসঙ্গত, ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা ৫ বছর বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে টিআই প্রতিবেদনে তালিকাভুক্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। পরে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতি হতে থাকে।