প্রায় পাঁচ মাস পর ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের আটটি দান সিন্দুক খুলে পাওয়া গেছে ৩ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা। প্রতি তিন মাস পরপর আটটি দান সিন্দুক খোলা হয়। কিন্তু এবার করোনার কারণে ৪ মাস ১৭ দিন পর শনিবার দান সিন্দুকগুলো খুলে পাওয়া গেছে রেকর্ড পরিমাণ ৩ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্র জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দান সিন্দুক খোলা হয়। আটটি দান সিন্দুক খুলে দানের টাকাগুলো প্রথমে ১২টি বস্তায় ভরে আনা হয় গণনার জন্য। বিকেল সাড়ে ৫টায় এ টাকা গণনার কাজ শেষ হয়। ৩ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা।
টাকা গণনার কাজে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ফারজানা খানম, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সে পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ পারভেজ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম, শিহাবুল আরিফ, অর্ণব দত্ত, মো. মাহমুদুল হাসান, রূপালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখার মহাব্যবস্থাপক ও শাখা প্রধান রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এর আগে সর্বশেষ চলতি বছরের ১৯ জুন পাগলা মসজিদের আটটি দান সিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন সর্বোচ্চ ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকা এবং বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়।
মসজিদের খতিব, এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন জানায়, এই মসজিদে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়- এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে দান করেন।
মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়। এবার করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছে এ দানের টাকা থেকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
পরে আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে এলাকার লোকজন ও দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। এই মসজিদে মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়- এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সী হিন্দু-মুসলিমসহ নানা ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে এখানে আসেন ।
তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলংকারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে।
এই ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা গেছে। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠেছিল।
মসজিদটির পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্য। মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবনও।
ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। মসজিদটিকে ঘিরে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ ব্যয় করা হয়।