ই-কমার্স লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা

0
44
ই-কমার্স লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা
ই-কমার্স লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, অনলাইন থেকে কোনো গ্রাহক পণ্য কিনলে সেই পণ্যের অগ্রিম মূল্য সরাসরি কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না।

গতকাল রোববার (২৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত নি‌র্দেশনা দি‌য়ে‌ছে। নির্দেশনাটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কা‌ছে পাঠা‌তে বলা হয়েছে।

নি‌র্দেশনায় বলা হ‌য়ে‌ছে‌, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সরকারের জারি করা ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা নির্দেশনা’ এড়ানোর উদ্দেশ্যে কিছু সংখ্যক ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে গ্রাহকদের থেকে পণ্য ও সেবামূল্যের অগ্রিম অর্থ সরাসরি গ্রহণ করছে। তাই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা দি‌য়ে‌ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে ডিজিটাল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো কোম্পানি বা কোম্পানিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবে পণ্য ও সেবামূল্যের অগ্রিম অর্থ সরাসরি জমা বা গ্রহণ করা যাবে না।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের হিসাব পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রদত্ত ট্রানজেকশন প্রোফাইলের যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই কর‌তে হ‌বে। পাশাপা‌শি লেনদেনের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ ও সামগ্রিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ তদারকি নিশ্চিত করে লেনদেন পরিচালনা করতে ব্যাংকগু‌লো‌কে নি‌র্দেশ দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। এ নির্দেশাবলী অবিলম্বে কার্যকর হবে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে গত ২৪ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বৈঠকে জানায়, গ্রাহক পণ্য বুঝে পাওয়ার আগে কোনো পেমেন্ট হবে না। পণ্য বুঝে পাওয়ার পরেই গ্রাহক টাকা পরিশোধ করবেন। এ নিয়ম দেশের সব ই-কমার্সের জন্য প্রযোজ্য। দেশে এখন থেকে অনলাইন কেনাকাটায় (ই-কমার্স) পণ্য বুঝে পাওয়ার পর সব ই-কমার্সের টাকা পরিশোধ করবেন গ্রাহক।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অনলাইনে পণ্য কেনাবেচা বা ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য দেশে এত দিন কোনো নিয়মকানুন ছিল না। ফলে ই-ভ্যালি, আলেশা মার্টসহ সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যে যার মতো লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহক টানছিল।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং বা অন্যান্য যে মাধ্যমেই পণ্যের অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করবেন ক্রেতা, বিক্রেতা কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে, মূল্য পরিশোধের ১০ দিনের মধ্যে ক্রেতার পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে। যে মাধ্যমে টাকা নেওয়া হয়েছে, সে মাধ্যমেই ফেরত দিতে হবে।

তবে যেসব পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি রয়েছে, সরবরাহের সময় সেগুলোর ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি কার্ড ক্রেতাকে দিতে হবে। সেই কার্ডে উল্লেখ থাকতে হবে কত দিন এবং কোথা থেকে এই সেবা পাওয়া যাবে। আরও বলা হয়, ক্রেতা যাতে সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সে জন্য পণ্যের মূল্য ও সব ধরনের করের কথা ওয়েবসাইটে উল্লেখ করতে হবে।

মার্কেটপ্লেসে বিক্রয়যোগ্য পণ্য বা সেবার যথাযথ বিবরণ, মূল্য, পণ্য পৌঁছানোসহ অন্যান্য খরচের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। পণ্যের মেয়াদোত্তীর্ণের কথাও জানাতে হবে। কোনো নকল বা ভেজাল পণ্য প্রদর্শন করা যাবে না।

বহুস্তর বিপণন পদ্ধতিতে (এমএলএম) পদ্ধতিতে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। চিকিৎসা বা ওষুধসামগ্রী কেনাবেচার ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হবে। কোনো ধরনের নেশাজাতীয় পণ্য বিক্রি করা যাবে না এবং জুয়ার আয়োজনও করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো ধরনের অর্থ ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। ক্রেতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো পণ্য কেনার জন্য বাধ্য করা যাবে না। ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোনো মাধ্যম, যা অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, সে ধরনের কিছু করা যাবে না।

টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো চার্জ (মাশুল) লাগলে তা মার্কেটপ্লেস বা বিক্রেতাকে বহন করতে হবে। মূল্য ফেরতের বিষয়টি ক্রেতাকে ফোন, ই-মেইল বা অন্য কোনো মাধ্যমে জানাতে হবে। নির্ধারিত সময়ে অর্থ ফেরত না পেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করতে পারবেন ক্রেতা।

পণ্য বা সেবা কেনাবেচা, ফেরত ও পরিবর্তনের শর্ত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বা মার্কেটপ্লেসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। পণ্য বা সেবা বিক্রি বা প্রসারের জন্য কোনো ধরনের লটারি বা লটারিজাতীয় কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারবে কোনো প্রতিষ্ঠান। কোন পণ্যের স্টক কত, তা-ও জানাতে হবে গ্রাহকদের।

পণ্য স্টক করার জন্য নিজস্ব গুদামঘর থাকতে হবে। অন্য বিক্রেতার পণ্য নিজেদের ই-কমার্স সাইটে বিক্রি করলে কী পরিমাণ পণ্য বিক্রির জন্য আছে, তার ওপর নির্ভর করেই ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ নিতে হবে। কোনো তৃতীয় পক্ষের পণ্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করা হলে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নাম ওয়েবসাইটে উল্লেখ থাকতে হবে।

সব ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য পর্যায়ক্রমে ইউনিক বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (ইউবিআইডি) বাধ্যতামূলক করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেল দেবে এই ইউবিআইডি। এই সেলের তালিকায় এক হাজারটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকার বলা হয়, বিক্রেতার ওয়েবসাইটে কোনো বিশেষ সফটওয়্যার থাকলে তা ক্রেতাকে আগেই জানাতে হবে। অভিযোগ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্মে ফোন নম্বর, ই-মেইল বা অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

অভিযোগ রেকর্ডের ব্যবস্থাও থাকতে হবে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। পণ্যের বা সেবার বিষয়ে মতামত বা রেটিং জানানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে ওয়েবসাইটে। এসব মতামত মুছে ফেলা যাবে না। আর নির্দেশিকা পালন না করলে অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানি নিবন্ধন, ভ্যাট নিবন্ধন বাতিল করে দেবে সরকার।