৩৪ বছর পর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত শেহবাজ শরিফ

0
55
৩৪ বছর পর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত শেহবাজ শরিফ
৩৪ বছর পর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত শেহবাজ শরিফ

মোহাম্মদ শেহবাজ শরিফ পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। রাজনীতি শুরুর পর উত্থান-পতনের ৩৪ বছরে এসে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব পান। দেশটির সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সদস্যরা জাতীয় পরিষদের অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করায় নিজেদের বলয়ের সদস্যদের ভোটে সহজেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। ৩৪২ আসনের জাতীয় পরিষদে ১৭৪ ভোট পান শেহবাজ শরিফ।

পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল পিটিআই। তাদের সদস্য সংখ্যা ১৫৫। কিন্তু সোমবার তারা অধিবেশন বর্জন করে। এরপর সম্মিলিত বিরোধী দলের ১৭৪ সদস্য ভোট দিয়ে শেহবাজকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন।

১৯৫০ সালে লাহোরে জন্ম নেওয়া শেহবাজ শরিফ পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা এবং তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই। তিনি পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাবের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মুশাররফ শরীফ ভাইদের সৌদি আরবে নির্বাসিত করার আগে ১৯৯৭-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শেহবাজ শরিফ। পরে আরও দুই দফায় ২০০৮-২০১৩ এবং ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

সর্বশেষ পিটিআইয়ের আমলে জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন তিনি। কাজপাগল হিসেবে পরিচিত শেহবাজ শরিফ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবর্তে নিজেকে খাদিম-ই-আলা (প্রধান কর্মচারী) বলতে পছন্দ করতেন।

পাকিস্তানের মিয়া পরিবারের মিয়া মোহাম্মদ শরিফের দ্বিতীয় ছেলে শেহবাজ শরিফ। দেশটির প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং ইত্তেফাক গ্রুপ অব কোম্পানির যৌথ মালিক ছিলেন তিনি। তিনি ১৯৮৫ সালে লাহোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

শেহবাজ ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতো পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের এমপিএ নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে জাতীয় পরিষদের আসনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন তিনি এবং এমএনএ নির্বাচিত হন। তবে ১৯৯৩ সালে তিনি আবারও প্রাদেশিক পরিষদের আসনে নির্বাচন করেন এবং পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা হন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেওয়া হলে তার মেয়াদ শেষ হয়।

১৯৯৭ সালের নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর শেহবাজ পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশটির শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব পান। ১৯৯৯ সালে পারভেজ মুশাররফের সামরিক অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত তিনি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে পাঞ্জাব প্রদেশে পিএমএল-এন সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পায়। প্রায় এক দশকের নির্বাসন থেকে ফিরে সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে শেহবাজ দ্বিতীয়বারের মতো পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন।

২০০৮ সালে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের তিনটি আসন (পিপি-১৫৯, পিপি-১৬১ এবং পিপি-২৪৭) এবং জাতীয় পরিষদের একটি আসনে (এনএ-১২৯) জয় পান শেহবাজ শরিফ। তবে সব আসন ছেড়ে দিয়ে ১৫৯ নম্বর আসন ধরে রাখেন তিনি। শেহবাজের ৩৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হয় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন পাঞ্জাবে মেট্রো বাস প্রকল্প বাস্তবায়ন।

তার ছেলে হামজা শেহবাজ শরিফও একজন এমপিএ এবং পাঞ্জাবের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী। পিটিআইয়ের শাসনামলে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকা পালন করেছেন হামজা।

২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও লাহোরের একটি আসনে জয় পান শেহবাজ শরিফ। পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের দুটি আসনেও জয় পেয়েছিলেন তিনি। পরে পিএমএল-এন এবং বিরোধী অন্যান্য দলগুলোর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। কিন্তু পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খানের কাছে ব্যাপক ব্যবধানে হেরে যান শেহবাজ। প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেহবাজ শরিফ মাত্র ৯৬ ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে ইমরান খান পেয়েছিলেন ১৭৬ ভোট।