রংপুর থেকে মিঠাপুকুর সদরে যাওয়ার আগে পশ্চিমে একটি রাস্তা চলে গেছে দিনাজপুর ফুলবাড়ির দিকে। সুন্দর পিচ আর পাথর গলানো সবুজে ছাওয়া ঐ রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে গেলে হাতের বাঁয়ে অর্থাৎ দক্ষিণে একটু দূরে সুন্দর ফ্যাকাশে ইট রঙের একটা পুরানো মসজিদ চোখে পড়বে। মসজিদটি এখন মিঠাপুকুর মসজিদ নামে পরিচিত। আবার অনেকেই একে মিঠাপুকুর বড় মসজিদ অথবা মিঠাপুকুর তিন কাতার মসজিদ বলে।
ইতিহাস সূত্রে জানা গেছে, ১২২৬ হিজরি বা ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে জনৈক শেখ মোহাম্মদ সাবেরের পুত্র শেখ মোহাম্মদ আছের এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের সামনে লাগানো তথ্য কণিকায় সুস্পষ্ট করে লেখা আছে ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দের কথা। কিন্তু উইকিপিডিয়াসহ বেশ কিছু স্থানে এর নির্মাণ সময় ১৮১০ খ্রিষ্টাব্দ বলা হয়েছে। আয়তকার তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের চার কোণে চারটি স্তম্ভ, যা ছাদের কর্নার থেকে বেশ ওপরে উঠে তৎকালীন মুসলিম সভ্যতার নির্মাণশৈলী ফুটিয়ে তুলেছে।
এটি ছোট গম্বুজের মতো কিউপোলা আকারে শেষ হয়েছে। আয়তকার মসজিদটি দুটি ল্যাটারাল খিলানের সাহায্যে তিন ভাগে ভাগ করে ওপরে নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি গোলাকার গম্বুজ। মসজিদের পূর্ব দিক দিয়ে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি প্রবেশপথ থাকলেও এখন পূর্ব দিকের মধ্যের পথটি ব্যবহার করা হয়। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট আয়তকার এ মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৬৬ মিটার ও প্রস্থ ৪ দশমিক ১১ মিটার।
মসজিদের তিন মিহরাব, সামনের দেওয়াল, প্যারাপেট দেওয়াল ও গম্বুজের গোলাকার অংশে দৃষ্টিনন্দন নকশা দিয়ে আবৃত করা হয়েছে। কিছু প্যানেল করা আছে। নকশায় লতাপাতা, ফুল ও জ্যামিতিক আবহ ফুটে উঠেছে। খুব আকর্ষণীয় এর মূল প্রবেশ দরজা। বাংলাদেশের নিজস্ব স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে দোচালা আকৃতির এ দরজা মসজিদের পূর্ব দিকের দেওয়ালের মধ্যে নির্মিত।
বর্তমানে নিরাপত্তার কারণে দৃষ্টিনন্দন লোহার গ্রিলের দরজা সেখানে লাগানো আছে। মূল দরজা দিয়ে ঢুকে সুন্দর একটি উঠান বা বারান্দা। ফ্যাকাশে লালচে ইট রঙের মসজিদটি চারদিকে সবুজ খেত-ফসলের মধ্যে অপূর্ব লাগে। এ মসজিদে এখনো নিয়মিত শত শত মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন।
মিঠাপুকুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন ভুঁইয়া বলেন, ‘মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে আছে। পুরাতত্ত্ব বিভাগ প্রাচীন মসজিদ হিসেবে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে এর গায়ে। দিন দিন সেখানে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই মসজিদের মূল কাঠামো ঠিক রেখে আরো প্রশস্ত করলে বেশি মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। তাছাড়া ঐতিহাসিকভাবেও এটি ঠিক থাকবে।’