“মেঘেরা দল বেধে যায় কোন দেশে
ও আকাশ বল আমারে”
অতুল প্রসাদ সেনের অত্যন্ত জনপ্রিয়, বহুলগীত একটি গান এটি। পুরো গানটিতে আকাশে মেঘের খেলার কথা, ভেসে বেড়ানোর, মেঘ গর্জনের উল্লাস, ভানুর সনে হোলি খেলা, বিধুর সনে মাধুর্য্য ইত্যাদি প্রকৃতির আনন্দরূপের কথা রয়েছে। মেঘের আনন্দ আর মনের আনন্দকে কথা, সুরে ছন্দে অভিন্নরূপে বেঁধেছেন কবি অতুল প্রসাদ সেন।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষণ ও মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের নিমিত্তে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে “স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ” শীর্ষক স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পী ও গুণীজনদের নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ বছর দেশের ৬২ জন মনীষীদের জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২৪ মে ২০২৪ থেকে ১২ জুন ২০২৪ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। আজ ৯ম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা ৬:০০ টায় জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে।
গীতিকবি এবং সুরকার অতুল প্রসাদ সেন
প্রাবন্ধিক আজিজুর রহমান তুহিন, সহযোগী অধ্যাপক, সংগীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর মতে, বাংলাগানের ধারায় যে পাঁচজন গীতিকবি বাংলা গানকে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, আধুনিকতার পথ দেখিয়েছেন সেই পঞ্চভাস্বরের অন্যতম গীতিকবি অতুলপ্রসাদ সেন।
কর্মসূত্রে লক্ষ্ণৌ প্রবাসী অতুলপ্রসাদ সেনের সমকালীন অন্যান্য গীতিকবিদের মত প্রচুর বাঙালি ভক্ত ছিল না, অপরাপর গীতিকবিদের মত সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও তেমন বিচরণ ছিল না তাঁর। তিনি কবি, নাট্যকার বা প্রাবন্ধিক নন, শুধুই গীতিকবি এবং সুরকার। সুরে, কথায় তাঁর গান যাপিত জীবনের অনুভূতির স্বতোৎসারিত প্রকাশ। লক্ষ্ণৌয়ের সফল আইনজীবি, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ অতুলপ্রসাদ সেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে প্রখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্ব অতুল প্রসাদ সেন এর স্মরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে শুরুতেই প্রদর্শিত হয় অতুল প্রসান সেনের জীবন ও কর্মের উপর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নির্মিত ১০ মিনিটের বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র। পরে অতুল প্রসাদ এর জীবন ও কর্মের উপর প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রাবন্ধিক আজিজুর রহমান তুহিন, সহযোগী অধ্যাপক, সংগীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রবন্ধের শিরোনাম ‘অতুল প্রসাদের গানে প্রেমের স্বরূপ’। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সারাবান তাহুরা, উপসচিব, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহম্মদ।
আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অতুল প্রসাদ সেনের গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী অন্তরা রহমান ও ড. অনুপম কুমার পাল।
চারণ কবি মুকুন্দ দাস
“আশা ও উদ্বগ্নিতার মাঝে ভোরের পাখির মতো ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে যিনি উচ্চারণ করেছিলেন ‘হাসিতে খেলিতে আসিনি এ জগতে, করিতে হবে মোদের মায়েরেই সাধন’। দেশমাতৃকার অসামান্য প্রেম ও ভক্তির সাথে সাহস ও বিদ্রোহের অন্যতম রূপকার সাহত্যিক ও সংগীতকার মুকুন্দ দাস মূলত ‘স্বদেশী যাত্রার প্রর্বতক’। ১৯০৫-০৬ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের উত্তাল স্রোতে অশ্বিনীকুমার দত্ত মুকুন্দ দাসকে বলেছিলেন ‘স্বদেশি যাত্রার দল তোমাকে করতেই হবে”- বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ড. সাইমা রানা, সহযোগী অধ্যাপক, সংগীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মুকুন্দ দাস ও ব্রিটিশ বিরোধীতা যেন একই ফ্রেমে বাঁধা। বিশ শতকের প্রারম্ভে ভারতবর্ষের পরাধীনতা রোধে ব্রিটিশ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী র্কাযক্রমে অসংখ্য কবি ও সাহিত্যিকের অবদান রয়েছে, কিন্তু তাঁর মতো প্রত্যক্ষভাবে মাঠে-ময়দানে নায়কোচিত পরিবেশেনা নির্ভর প্রভাব বিস্তারকারীর উদাহরণ সহসা মেলে না। বরং তাঁর বীর্যবত্তা আবেগকে ধারণ করেই পরর্বতীতে কাজী নজরুল ইসলামসহ অসংখ্য বিপ্লবী সংগীত রচনায় প্রবৃত্ত হয়েছিলেন।
“ছেড়ে দেও কাচের চুড়ি বঙ্গনারী
কভু হাতে আর পরো না,
জাগো গো ও জননী ও ভগিনী
মোহের ঘুমে আর থেকো না”।
মুকুন্দ দাসের বিদ্রোহের ভাষা ছিল সরাসরি, গানের মাধ্যমে সেই কথা উচ্চারণ করেছেন বিদেশী যাবতীয় দ্রব্য বর্জনের দুঃসাহসিক ঘোষণা দিয়ে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিশিষ্ট চারণ কবি মুকুন্দ দাস এর স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। শুরুতেই প্রদর্শিত হয় মুকুন্দ দাসের জীবন ও কর্মের উপর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র। ‘মুকুন্দ দাস: দ্রোহ, নির্ভয় ও আরাধনার মহাযাত্রিক’ প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ড. সাইমা রানা, সহযোগী অধ্যাপক, সংগীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইয়াত সিংহ শুভ, সহকারী অধ্যাপক, সংগীত বিভাগ, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহম্মদ।
সাংস্কৃতিক পর্বে চারণ কবি মুকুন্দ দাসের সংগীত পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী আবিদা সুলতানা সেতু ও আরিফুর রহমান।