
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানির সংখ্যা মাত্র সাতটি। এর মধ্যে তিনটিতেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কোনো বিনিয়োগ নেই। বাকি চারটিতে রয়েছে নামমাত্র বিনিয়োগ। তার মধ্যে আবার গত এক বছরে তিনটি থেকে বিনিয়োগের একটি অংশ তুলে নিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর প্রতি যেন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহই নেই।
সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর শেয়ারের প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ কম থাকার কারণ হিসেবে বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সিমেন্টের ব্যবসা করা বড় প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বাইরে রয়ে গেছে। ছোট ছোট কিছু দেশি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না, যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে তারা বিনিয়োগ করছেন না।
তারা আরও বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অত্যন্ত চালাক। তারা সব সময় মুনাফা তুলে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে বিনিয়োগ করেন। তাছাড়া বিদেশিদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও থাকে। কিন্তু সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর মুনাফার ক্ষেত্রে খুব একটা ধারাবাহিকতা নেই। এক প্রান্তিকে ভালো মুনাফার পর পরের প্রান্তিকেই মুনাফা কমে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ না করার ক্ষেত্রে এটিও একটি কারণ।
তালিকাভুক্ত সিমেন্ট কোম্পানিগুলোতে বিদেশিদের বিনিয়োগের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এরামিট সিমেন্ট, কনফিডেন্স সিমেন্ট এবং মেঘনা সিমেন্টে বিদেশিদের কোনো বিনিয়োগ নেই।
এর মধ্যে ১৯৯৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এরামিট সিমেন্ট লোকসানের মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে। লোকসানের কবলে পড়ে ২০১৬ সালের পর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
চলতি হিসাব বছরের (২০২০-২১ অর্থবছর) প্রথম ছয় মাসের ব্যবসায়ও প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের মধ্যে রয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে ২৩ পয়সা। অবশ্য শেষ প্রান্তিকে (২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর) কোম্পানিটি ১ টাকা ৯ পয়সা শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে।
শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত ভালো লভ্যাংশ দিলেও কনফিডেন্স সিমেন্টর প্রতিও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানি নগদ ও বোনাস শেয়ার মিলিয়ে নিয়মিতই বিনিয়োগকারীদের ৩০ শতাংশের ওপর লভ্যাংশ দিয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে। তার আগে ২০১৮ ও ২০১৭ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। চলতি হিসাবে বছরের প্রথম ছয় মাসেও (২০২০ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর) প্রতিষ্ঠানটি বড় মুনাফায় রয়েছে। এই ছয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৮ টাকা ২ পয়সা। এরপরও কোম্পানিটির শেয়ারে বিদেশিদের বিনিয়োগ নেই।