শীতে মশার উপদ্রব, ভোগান্তিতে নগরবাসী

0
61
মশার উপদ্রব ভোগান্তিতে নগরবাসী

নগরীতে হঠাৎ করেই মশার উপদ্রব জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলছে। মশার উপদ্রবে ডেঙ্গু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে নগরবাসীর মনে। ২০১৯ সালে দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় লক্ষাধিক মানুষ। এতে নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল। সে সময় দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনাও হয়।

এদিকে এবারের শীত মৌসুমে মশার উপদ্রবে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন নগরবাসী। তারা বলছেন, নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। আবার মাঝে মাঝে যে মশক নিধন স্প্রে করা হয় তাও কার্যকর নয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। একই সঙ্গে তাদের মনে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ সময়ে কিউলেক্সসহ অন্যান্য মশার আক্রমণে ফাইলেরিয়াসিসসহ চিকুনগুনিয়া রোগেরও ঝুঁকি রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন নগরবাসী।

সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ওষুধের গুণগত মান পরীক্ষা করছি। বলা যায়, গুরুত্বের সঙ্গেই মশার উপদ্রব রোধে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি বিভিন্ন খাল ও ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেল্থ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যে জানা গেছে, হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত এক মাসে ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

রাজধানীর রামপুরা, মগবাজার, গুলশান, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, নতুনবাজার ও বাসাবো এলাকার বাসিন্দারা বলেন, বিকেল হতেই মশার উপদ্রব শুরু হয়। মশারি টানিয়েও রেহাই পাওয়া যায় না। আবার কয়েলের ধোঁয়া সহ্য হয় না। তাই কয়েলও ব্যবহার করা যায় না।

যে ওষুধ দেয় তাতে তো মশা মরে না, খালি ধোঁয়া হয়। এভাবে না করে মশা মারার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ আমরা ঘরেও বসতে পারি না। বাচ্চারা পড়তে পারে না। সন্ধ্যা হলেই মশারির মধ্যে ঢুকতে হয়। তারপরও তো আতঙ্ক থাকে

মশা নিধনে করা স্প্রের ওষুধ কাজে আসছে না দাবি করে তারা বলেন, আমরা দেখি বিকেলে বা সন্ধ্যায় স্প্রে করছে, কিন্তু মশার তো কিছুই হয় না। তা নাহলে রাত হতেই মশার উপদ্রব শুরু হবে কেন? আমরা বলতে চাই, মশা নিধনে যে স্প্রে (ওষুধ) ব্যবহার করা হয় তা কার্যকর কি-না আগে পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে ছিটাতে হবে। এছাড়া নগরীতে মশার বৃদ্ধি যাতে না হয় এজন্য কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

এদিকে গত ২৪ জানুয়ারি সচিবালয়ে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটি করপোরেশনের গৃহীত কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনা সভার শুরুতে ‘রাজধানীতে মশা অসহ্য ও যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। এর আগে ২১ জানুয়ারি অনলাইনে আয়োজিত ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর ও সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য ৮ম আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এডিস মশার মতো কিউলেক্স ও অ্যানোফিলিসসহ সব ধরনের মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

এ সময় তিনি রাজধানীবাসীসহ দেশের মানুষকে মশার অত্যাচার থেকে মুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। বিশেষ করে, দীর্ঘদিন একই কীটনাশক ব্যবহারে ‘মশা সহনশীল হয়ে যায়’ দাবি করে কার্যকর ওষুধ কেনার পাশাপাশি তদারকি বাড়ানোর তাগিদও দেন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা ও মশার বিড়ম্বনা সম্পর্কে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত মোরশেদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি আগে ভাড়া বাসার নিচতলায় থাকতাম। মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে সব ধরনের চেষ্টা করেছি। এর মাঝে একদিন হঠাৎ অসুস্থবোধ করি। এরপর জ্বর চলে আসে। এ সময় অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে থাকেন। পরে বাধ্য হয়েই টেস্ট করি। ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। দিন দিন আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ি। যে বাসায় থাকতাম সেখানে এডিস মশার লার্ভাও পাওয়া গিয়েছিল। পরে বাসা পরিবর্তন করি। এখন অন্য বাসার চারতলায় থাকি। কিন্তু তারপরও মশার উপদ্রব থেকে রেহাই নেই। কয়েল জ্বালিয়ে, স্প্রে ব্যবহার করে এবং মশারি টানিয়েও মশার হাত থেকে বাঁচতে পারছি না। এখন তো মশা দেখলেই ডেঙ্গুর ভয় চলে আসে!’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় প্রতিদিন ঘরে-বাইরে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। ঘরে এসেও মশার যন্ত্রণায় ঘুমানো যায় না। মাসিক আয়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ মশার হাত থেকে রেহাই পেতে ব্যয় করতে হয়। মাঝে মাঝে যে স্প্রে করতে দেখি তাতেও কোনো কাজ হয় বলে মনে হয় না। তাহলে আমরা মশার উপদ্রব থেকে কীভাবে রেহাই পাব?’

হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, ‘বিকেলে যে এখানে ঘুরতে আসবো তাও শান্তি নেই। সন্ধ্যা নামার আগেই মশার উপদ্রব শুরু হয়। বাধ্য হয়েই এখানে থাকতে পারি না, আর আসাও হয় না।’

পশ্চিম রামপুরার বাসিন্দা শিল্পী বলেন, ‘যে ওষুধ দেয় তাতে তো মশা মরে না, খালি ধোঁয়া হয়। এভাবে নামমাত্র স্প্রে না করে মশা মারার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ আমরা ঘরেও বসতে পারি না। বাচ্চারা লেখাপড়া করতে পারে না। সন্ধ্যা হলেই মশারির মধ্যে ঢুকতে হয়। তারপরও তো আতঙ্ক থাকে। ডেঙ্গুর কারণে মানুষের যে কষ্ট হয় তা তো দেখেছি। এই শীতে যেন মশার বিড়ম্বনা বেশিই।’