
উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় খাদ্যশস্য কিনোয়া। হাইপ্রোটিন সম্পন্ন এ খাবারটিকে সুপার ফুডও বলা হয়। সেই কিনোয়া নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে গবেষণা করা হয়েছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দীর্ঘ গবেষণা শেষে মাঠ পর্যায়ে পাঁচটি প্লটে নতুন এ ফসলটির চাষ করা হয়েছে।
লালমনিরহাটে দুটি, কুড়িগ্রামে একটি ও পটুয়াখালীতে দুটি প্লটে চাষাবাদ হচ্ছে। দুটি প্লটে ৫০ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে লালমনিরহাটে। আশানুরূপ উৎপাদন হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস বলেন, আমি পাঁচ বছর গবেষণার পর মাঠ পর্যায়ে কিনোয়া চাষ শুরু করেছি। ফলাফলও আশানুরূপ। আমার আবেদনের পর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে কিনোয়া চাষের অনুমোদন দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। খরাপ্রবণ ও লবণাক্ত দুই ধরনের জমিতেই কিনোয়া চাষ সম্ভব।
নভেম্বরের মাঝামাঝি এ ফসল চাষ করে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঝামাঝি সময় ফলন ঘরে তোলা যায়। বাংলাদেশে বাজার সৃষ্টি হলে আমাদের কৃষক কিনোয়া চাষ করে লাভবান হতে পারবেন। দেশে কিনোয়ার মার্কেট তৈরিতে কাজ চলছে। উৎপাদিত কিনোয়া বিদেশেও রপ্তানি করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, কিনোয়া হলো হাইপ্রোটিন সম্পন্ন খাবার। এটিকে সুপার ফুডও বলা হয়। কিনোয়ায় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে এবং লাইসিন সমৃদ্ধ, যা সারা শরীরে স্বাস্থ্যকর টিস্যু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কিনোয়া আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-ই, পটাসিয়াম এবং ফাইবারের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। রান্না করা হলে এর দানাগুলো আকারে চারগুণ হয়ে যায় এবং প্রায় স্বচ্ছ হয়ে যায়।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এটি নিয়ে গবেষণা করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছে। লালমনিরহাটে কিনোয়ার চাষ শুরু হওয়ার বিষয়টা আমরা জানতে পেরেছি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়ুয়া গ্রামের কৃষক মুকুল কুমার রায় বলেন, আমি কৃষিবিদ ইকবাল হাসানের পরামর্শে ২৫ শতাংশ জমিতে কিনোয়া চাষ করেছি। তার কাছ থেকে বীজ সহায়তা পেয়েছি এবং তিনি এই ফসলের চাষ পদ্ধতি দেখিয়ে দিয়েছেন। কোনো রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছাড়াই জৈব সার ব্যবহার করে এই ফসলের চাষ করেছি। ফলন আশানুরূপ হয়েছে। মার্কেট সুবিধা পেলে আগামীতে বেশি জমিতে এ ফসল চাষ করব।
একই উপজেলার চিনিপাড়া গ্রামের কৃষক ইসরাইল হোসেন বলেন, আমিও কিনোয়া ফসল সম্পর্কে জানতাম না। ইকবাল হাসানের পরামর্শে ২৫ শতাংশ জমিতে কিনোয়া চাষ করেছি। কিনোয়া চাষ করতে আমার খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। আশা করছি ২৫ শতাংশ জমি থেকে ৮০-৯০ কেজি ফলন পাব।