গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্বান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব, গাজীপুর জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। তাকে সহযোগিতা করেছেন ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন ও মশিউর রহমান সবুজ। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. নওরোজ রাসেল চৌধুরী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. গোলাম সারওয়ার পায়েল।
এর আগে মেয়র পদ ফিরে পেতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়রের করা রিটের বিষয়ে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) হাইকোর্টের নির্ধারিত দিনে শুনানি হয়। পরে আদালত আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৭ আগস্ট এ বিষয়ে শুনানি করতে গেলে শুনানি না করে ২৩ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেন হাইকোর্ট। তারই ধারাবাহিকতায় আজ রিটের শুনানি নিয়ে আদেশ দেন আদালত।
এ বিষয়ে বেলায়েত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, মেয়র পদ ফিরে পেতে এবং তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তের আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট রিট দায়ের করেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই রিটের শুনানি শেষে আদেশের জন্য ২৩ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল সোমবার বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা ৭ মামলায় তাকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। পঞ্চগড়, রাজবাড়ী, গাজীপুর, নওগাঁ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ জেলায় দায়ের করা মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন।
এর আগে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। এরপর ওই বছরের ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ ওঠে। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
চার মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলকে কটূক্তি করেন। এমনকি রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থা নিয়েও নানা আপত্তিকর মন্তব্য করেন তিনি। জাহাঙ্গীর মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর দেশ স্বাধীন করার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
এ ঘটনায় গাজীপুরে মেয়রের শাস্তির দাবিতে মশাল মিছিল বের হয়। রাজনীতির অঙ্গনে জাহাঙ্গীরের বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গাজীপুরের পরিস্থিতি শান্ত করতে আওয়ামী লীগ উদ্যোগ নেয়।
গত ৩ অক্টেবর দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে শোকজ করে আওয়ামী লীগ। এতে সই করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নোটিশে ১৫ দিনের মধ্যে জাহাঙ্গীরকে জবাব দিতে বলা হয়। শোকজের জবাব দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান জাহাঙ্গীর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমা পাননি তিনি।