ব্রি ধানের নতুন জাতে বিঘাপ্রতি ফলন ৩১ মণ

0
45
ব্রি ধান ৮১
ব্রি ধান ৮১

দীর্ঘকাল ধরে দেশে বোরো উৎপাদনের সিংহভাগই আসছে ‘ব্রি ধান ২৮’ এবং ‘ব্রি ধান ২৯’ থেকে। তবে দুই যুগের বেশি পুরনো এসব জাতগুলোর উৎপাদনশীলতা দিন দিন কমেই চলেছে। অন্যদিকে বাড়ছে নতুন নতুন রোগ-বালাইয়ের প্রকোপও। ফলে পুরনো এসব জাতের বিকল্প হিসেবে নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষের চেষ্টা চলছে প্রতিনিয়ত।

এরমধ্যে এ বছর সবচেয়ে আশা জাগানো নতুন জাত হিসেবে উঠে এসেছে ‘ব্রি ধান ৮১’। এছাড়াও ‘ব্রি ধান ৮৮’, ‘ব্রি ধান ৮৯’, ‘ব্রি ধান ৯২’ ও ‘ব্রি ধান ৯৬’ পুরনো জাতগুলোর তুলনায় পরীক্ষামূলক প্রদর্শনীতে দারুণ ফলন দিয়েছে এবারের বোরো মৌসুমে।

জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত বোরো মৌসুমে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ফলন দিয়েছে ব্রি ৮১। চাষিরা বিঘাপ্রতি ৩১ মণ ফলন পেয়েছেন উচ্চফলনশীল এ জাতটি থেকে। যেখানে প্রতি হেক্টরে আগের জনপ্রিয় জাত ব্রি ২৮ উৎপাদন হতো ৬ টন, সেখানে একই জমিতে এ ব্রি ৮১ চাষ করে ধানের ফলন পাওয়া গেছে সাড়ে ৭ টন পর্যন্ত।

এ নতুন জাতের ধানের উৎপাদনই শুধু বেশি নয়। পুষ্টিমানের দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে এটি। ব্রি ২৮-এ আমিষের পরিমাণ ৮ দশমিক ৬ পিপিএম আর ব্রি ৮১-তে রয়েছে ১০ দশমিক ৩ পিপিএম আমিষ। এছাড়া এই চালে অ্যামাইলোজ বেশি, যার পরিমাণ ২৫ শতাংশের ওপর।

নতুন জাতের ধানের উৎপাদনই শুধু বেশি নয়। পুষ্টিমানের দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে এটি। ব্রি ২৮-এ আমিষের পরিমাণ ৮ দশমিক ৬ পিপিএম আর ব্রি ৮১-তে রয়েছে ১০ দশমিক ৩ পিপিএম আমিষ। এছাড়া এই চালে অ্যামাইলোজ বেশি, যার পরিমাণ ২৫ শতাংশের ওপর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মানুষের ক্যালোরি ও আমিষের চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি পূরণ হয় ভাত থেকে। ফলে আমিষের ঘাটতি পূরণেও সহায়ক হবে নতুন জাতের এই ধান। সে কারণেই ধানের এই নতুন জাতটিকে দ্রুত কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, ব্রি ৮১ সহ কাছাকাছি কয়েকটি জাত সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ আগের জাতগুলোর উৎপাদন কমে গেছে। রোগ-বালাই বেশি হচ্ছে।

তিনি বলেন, নতুন জাতগুলো ফলন বেশি বলে বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়ক। কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব এলাকায় নতুন যেসব জাতের উৎপাদন বেশি সেই বীজ বিতরণ করা হবে।

মহাপরিচালক আরও বলেন, কয়েকটি নতুন জাতের প্রদর্শনী শেষ হয়েছে এ বছর। ব্রি ৮১ চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ একরে প্রদর্শনী হয়েছে। সেখানে এ বছর এক টন বীজ বিতরণ করা হবে। এছাড়া সারা দেশে যেখানে যে জাত ভালো হবে তারই প্রদর্শনী করা হবে।

আসাদুল্লাহ বলেন, আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে কীভাবে দ্রুত এসব জাত কৃষকের মধ্যে পৌঁছানো এবং জনপ্রিয় করে তোলা যায়। বিআইডিসি নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থায় এসব বীজ উৎপাদন করবে, সেটাও কৃষকদের মধ্যে স্বল্পমূল্যে পৌঁছাবে।

এদিকে, ফলন বেশি হওয়াতে কৃষকরাও নতুন নতুন জাতের ধান চাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের রহনপুর কৃষক সিরাজ মিয়া এ বছর প্রথম চার বিঘা জমিতে ব্রি ৮১ জাতের ধান চাষ করেছিলেন।

তিনি বলেন, এবার নতুন জাত চাষ করে বিঘাপ্রতি ৩০ মণ করে ফলন পেয়েছি। এর আগে ব্রি ২৮ আবাদ করে ২০ থেকে ২২ মণ ধান পেতাম। তাই প্রতিবারই বোরোধান আবাদ করে খরচ উঠিয়ে লাভ করা নিয়ে হতাশায় থাকতে হয়েছে। কিন্তু এবার নতুন ধানের ফলন খুব ভালো। বাজারের যে দর যাচ্ছে বিঘাপ্রতি কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা বাড়তি দাম পাওয়া যাবে।

ব্রি ৮১ চাষ করেছেন এমন আরও কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, এ ধানে সেচ ও পরিচর্যা কম লেগেছে। পাশাপাশি অন্য ধানের চেয়ে ফলন পেতে সময়ও লাগে কম। ব্রি ২৯ জাতের ধানের তুলনায় ১০-১৪ দিন আগেই এ ধান পেকেছে।