মহামারি করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সম্ভাব্য ঊর্ধ্বগতির কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি ও ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিশ্বের দেশগুলোকে স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা ও টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক ডিরেক্টর ড. তাকেশি কাসাই বলেন, বিভিন্ন দেশে করোনার ওমিক্রন ধরনে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
তিনি বলেছেন, খবর এই মুহূর্তে আমরা পাচ্ছি, প্রকৃত চিত্র তার থেকেও ব্যাপক- ‘ভৌগলিকভাবে তা ইতোমধ্যেই অনেক বেশি ছড়িয়ে গেছে।’
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট থেকে করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ আসার সম্ভাবনার জন্য সব দেশকে তৈরি থাকতে বলেছেন ড. কাসাই। তিনি বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে যেসব শিক্ষা আমরা পেয়েছি নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় তা কাজে লাগাতে হবে।
শুক্রবার প্রকাশিত নতুন তালিকায় বলা হয়েছে, কমপক্ষে ৩০ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন। এসব দেশে মোট ৩৭৫ জন করোনার এই ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন। দুই দিন আগেও ওমিক্রনের সংক্রমণ তালিকায় ছিল ১২টি দেশের নাম।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবর অনুযায়ী ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়া ৩০ দেশ হলো- ভারত (শনাক্ত ২), দক্ষিণ আফ্রিকা (১৮৩), বতসোয়ানা (১৯), নেদারল্যান্ডস (১৬), হংকং (৭), ইসরায়েল (২), বেলজিয়াম (২), যুক্তরাজ্য (৩২), জার্মানি (১০), অস্ট্রেলিয়া (৪), ইতালি (৮), চেকিয়া (১), ডেনমার্ক (৬), অস্ট্রিয়া (৪), কানাডা (৭), সুইডেন (৪), সুইজারল্যান্ড (৩), স্পেন (২), পর্তুগাল (১৩), জাপান (২), ফ্রান্স (১), ঘানা (৩৩), দক্ষিণ কোরিয়া (৩), নাইজেরিয়া (৩), ব্রাজিল (২), নরওয়ে (২), সৌদি আরব (১), আয়ারল্যান্ড (১), সংযুক্ত আরব আমিরাত (১) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১)।
ওমিক্রন নিয়ে গবেষণা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আরো বলেছে, ভ্রমণের ওপর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কোনো দেশ এই ভ্যারিয়েন্টের ঢোকা শুধু বিলম্বিত করতে পারবে, কিন্তু তা একেবারে ঠেকাতে পারবে না।
সংস্থার আপদকালীন আঞ্চলিক ডিরেক্টর ড. বাবাতুন্ডে ওলউকুরে বলেছেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের গতিপ্রকৃতি বুঝতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশাল সংখ্যক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে বর্তমানে একযোগে কাজ করছে। তবে এখন পর্যন্ত তারা এমন কোনো তথ্য পায়নি, যার জন্য এই মহামারি মোকাবিলায় এই মুহূর্তে নতুন দিক-নির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিটি দেশ যেন তাদের নিজস্ব ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান পদক্ষেপগুলো জোরদার করে, যেমন- মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সংক্রমিতদের ট্রেস করা, আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখা এবং টিকাদান অব্যাহত রাখা।
ড. কাসাই স্কুল খোলা রাখার ঝুঁকিগুলো মূল্যায়ন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবার ওপরও জোর দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে ওমিক্রনকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ ঘোষণা করা হয়।
ভাইরাসের এই ধরনটি আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর থেকে দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বর্তমান টিকা এই ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে কতটা কার্যকর হবে সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় নজিরবিহীন সংক্রমণ
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন সে দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নজিরবিহীন মাত্রায় বাড়ছে।
মাত্র দু সপ্তাহ আগে যেখানে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল গড়ে তিন শতের সামান্য বেশি, সেখানে এখন প্রতিদিন নতুন কোভিড শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১১ হাজারের বেশি।
জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, মহামারীর এই চতুর্থ ঢেউ আগের তুলনায় অনেক মারাত্মক রূপ নিয়েছে। নজিরবিহীন মাত্রায় সংক্রমণ বাড়ছে, তবে ওমিক্রন আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় বেশি প্রাণঘাতী এমন প্রমাণ তারা এখনো পাননি বলে জানাচ্ছেন।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো ফাহলা জনসাধারণকে টিকা নেবার অনুরোধ জানিয়েছেন।
জোহানেসবার্গ থেকে বিবিসির সংবাদদাতা পুমজা ফিলহানি জানাচ্ছেন, দেশটির গাউতেং প্রদেশে, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সেখানে আগের ঢেউগুলোর তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর কারণ কী তা তারা গবেষণা করে দেখছেন।
ওমিক্রনের নতুন উপসর্গ
বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানীরা নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে নানা ধরনের গবেষণার চালাচ্ছেন।
এর মধ্যেই কেউ কেউ ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে এই ভ্যারিয়েন্টে কিছুটা ভিন্ন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
ওমিক্রনে ব্যথা-বেদনার কিছু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তবে স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি চলে যাবার উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। তবে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা এক্ষুনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত মতামত দিতে চাইছেন না।
এই মুহূর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো, ওমিক্রনের উপসর্গগুলো কোভিড-১৯-এর অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গ থেকে যে খুব আলাদা তার পক্ষে তথ্যপ্রমাণ বিজ্ঞানীরা এখনো পাননি।
ফলে, নতুন করে কাশি, জ্বর এবং স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়াকেই এখনো কোভিড আক্রান্ত হওয়ার প্রধান তিনটি উপসর্গ হিসেবে তারা গণ্য করছেন।
ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঁচের কম বয়সীদের তুলনামূলকভাবে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।