বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান

0
58
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এখন অনেকেই অর্থশালী ও সম্পদশালী হয়ে গেছেন। আপনারা বিল দেবেন, বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে আমরা যে বিদ্যুৎটা উৎপাদন করছি, তার খরচটা অনেক বেশি। আমরা গ্রাহক সেবা দেওয়ার জন্য ব্যাপক হারে ভর্তুকি দিচ্ছি। উৎপাদনের খরচ বিল হিসাবে দিতে হচ্ছে না। অনেক কম টাকা বিল নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাই সচেতন হবেন।


রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।


শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের উন্নয়নের অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটার প্রচার পায়নি। পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসকেরা উন্নয়ন না করলেও ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। ঠিক একইভাবে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সময়কার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর বারবার ক্ষমতাবদল। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে একের পর এক… ১৯টা ক্যু হয়েছে এই দেশে। ক্ষমতা সেনানিবাসে, সামরিক শাসকদের হাতে। ডিরেক্টলি বা ইনডিরেক্টলি। অভার্টলি অর কভার্টলি। তাদের হাতেই ক্ষমতা। ক্ষমতাকে তারা ভোগের বস্তু বানিয়েছে। কিছু চাটুকারের দল, তোষামোদি-খোশামোদি সৃষ্টি করে তাদেরকে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। দেশের মানুষের কল্যাণে বা উন্নয়নে তাদের কোনো অবদান ছিলও না। কিন্তু প্রচার পেয়েছে ব্যাপক।


তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এত উন্নয়নের কাজ করে গেছেন। সেখানে ঠিক উল্টো প্রচার করা হত। যেটা এখনও আমি এত উন্নয়ন করার পরেও কিছু কিছু লোকের মুখে, কিছু কথা যখন শুনি। সেই সব সুরের প্রতিধ্বনিটাই যেন আমি শুনতে পাই। সেই সব শ্রেণির লোকেরাই কিন্তু সমালোচনা কিংবা বলেই যায়। যদিও আমি এসব পরোয়া করি না। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের কাজ করতে হবে। কারণ যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছেন সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমি বিদ্যুৎ খাত সম্পূর্ণ বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করলাম। সেই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগও আনলাম। আমার হাতে প্রথম বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেঘনাঘাটে চারশ ৫০ মেগাওয়াট এবং হরিপুরে তিনশ ৬০ মেগাওয়াট। এগুলো আমেরিকার ইএস কোম্পানি উৎপাদন করেছে।


সরকার প্রধান বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিশেষ আইনও আমরা করেছি। যদিও এসব কারণে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। শুধু সমালোচনা না ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলাও দিয়েছিল। যে কয়টা ভালো কাজ করেছি, তার সবকয়টার জন্য মামলা খেয়েছি। আবার ২০০৭ সালেও মামলা খেয়েছি। আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টাও (তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী) আমার সঙ্গে আসামি ছিলেন। আমরা কাজও করেছি। আবার এই ধরনের হয়রানিও শিকার হয়েছি। কিন্তু থেমে থাকিনি।


তিনি বলেন, আমরা সরকারি বা বেসরকারি কিংবা যৌথভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেই হবে না। এর জন্য সঞ্চালন লাইন প্রয়োজন। সেটাও আমরা নির্মাণ করে যাচ্ছি। পল্লি বিদ্যুৎ আগে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারত না। আমাদের সরকারি বিদ্যুৎ থেকে কিনে নিতে হত। এখন আমরা তাদের সেই সুযোগটা দিয়ে দিয়েছি। তারা নিজেরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সঞ্চালন করতে পারবে।

তিনি বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য দেশের গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছাক। কারণ একমাত্র বিদ্যুৎ দিলেই মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাদের উন্নতির বিষয়টি আমরা সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ পেলে মানুষ নিজের কর্মসংস্থান করতে পারে। বিদ্যুৎ ব্যবহার যদি সারা বাংলাদেশে না পৌঁছাতে পারি তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করতেও পারব না। মানুষ তার সুফল পাবে না। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিএনপি-জামায়াত সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার এর জন্য আন্দোলন করেছিল বলে, তাদের গুলি করে হত্যা করা হলো। এটা অবশ্য বিএনপির চরিত্র। কারণ কৃষকরা যখন সারের দাবিতে আন্দোলন করল। তখন ১৮ জন কৃষককে হত্যা করেছিল।



তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে একটি বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল। ২০১৩ সালে যখন অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। তখন সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটা শুধু আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়নি, সেখানে কর্মরত প্রকৌশলীকে পুড়িয়ে হত্যা করে। মানুষকে দিতে পারে না, কিন্তু তাদের জীবন নিতে পারে। আর ধ্বংস করতে পারে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।


সরকার প্রধান বলেন, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার মেট্রোরেল চালু হবে। পর্যায়ক্রমে আমরা বিদ্যুৎ চালিত বাসের ব্যবস্থা করতে পারব। বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি হয়ত দেশেই উৎপাদন করতে পারব। রেলকে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ ব্যবহারে নিয়ে আসব। এ রকম অনেক পরিকল্পনা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য রয়েছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন যেমন বাড়ছে। ঠিক তেমনি বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়ছে। আমাকে গ্রামের একজন বলল, আপা ভাত এখন চুলায় রান্না করি না, রাইস কুকারে রান্না করি। আমরা যেকোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করলে অবশ্যই আমরা বিশেষভাবে পরিবেশের দিকে খেয়াল রাখি। পরিবেশ রক্ষার ব্যবস্থা নিয়েই আমাদের পদক্ষেপ সবসময় গ্রহণ করি।


তিনি বলেন, মানুষের আর্থিক সঙ্গতি বেড়েছে। ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। গ্রামের মানুষ টিভি, ফ্রিজ এমনকি এসিও ব্যবহার করছে। মানুষের সক্ষমতা আস্তে আস্তে গড়ে উঠছে। সেটা আরও গড়ে উঠুক সেটাই আমি চাই। এই বৈষম্যটা যেন থাকে না। মানুষ যেন সবধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সময় সাশ্রয়ী না হলে কত ভর্তুকি আমরা দিতে পারব। সেটা দেখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন বের হই। তখন যেখানে যেখানে অপ্রয়োজনীয় তার সুইচগুলো বন্ধ করি। আমি জানি গণভবন সরকারি। এখনকার নিয়ম হচ্ছে সব জ্বালিয়ে রাখা। কিন্তু আমি যতটুকু জায়গায় থাকি সেটার সাশ্রয়টা সঠিকভাবে করে রাখি, যাতে অভ্যাসটা ঠিক রাখি। কারণ চিরদিনই কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকে না। এটাতো পাঁচ বছরের জন্য আসে। এরপর আরও থাকব না। তখনতো নিজের মতোই চলতে হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহার অভ্যাসটা নষ্ট করে লাভ নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নে আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা করেছি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে দেশের উন্নয়নের গতিটা এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেটাই আমরা চাই। এমন কেউ না আসে, যাতে আবার এই বাংলাদেশকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলবে চলমান থাকে সেই পরিকল্পনা আমরা করে দিয়েছি।

উদ্বোধন করা পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি সরকারি আর দুটি বেসরকারি। এতে জাতীয় গ্রিডে সাতশ ৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াসেকা আয়েশা খান। গণভবন থেকে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।