ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে কোরআনের নির্দেশনা

0
26
কোরআনের নির্দেশনা
ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে কোরআনের নির্দেশনা

পবিত্র কুরআন মুসলমানদেরকে শুধুমাত্র নামাজ, রোজা ও হজ পালনের আদেশই দেয়নি; বরং যেখানে জুলুম হচ্ছে, যেখানে নির্যাতিত হচ্ছে নিরীহ মানুষ — সেখানে প্রতিবাদ করা, মজলুমদের পাশে দাঁড়ানো এবং জালেমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোও ঈমানের দাবির অন্তর্ভুক্ত করেছে। আজকের ফিলিস্তিন সংকট কেবল একটি ভূখণ্ডগত দখলদারির প্রশ্ন নয়, এটি মুসলিম উম্মাহর এক চরম ইমানি পরীক্ষার মুহূর্ত।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন, “পবিত্র সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতারাতি মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে গেছেন, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি, যেন তাঁকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ১)

এই বরকতময় ভূমি—ফিলিস্তিন—এখন জুলুম ও নিপীড়নের শিকার। কুরআন নির্দেশ দেয়, “যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা হচ্ছে, তাদেরকে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কারণ তাদের ওপর জুলুম হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম। যাদেরকে অন্যায়ভাবে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে কেবল এই কারণে যে, তারা বলেছিল—আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ।” (সূরা হজ, আয়াত ৩৯-৪০)

আল্লাহ আরও বলেন, “তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করো সেইসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষ নিয়ে, যারা বলে—হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এই জালেম জনপদ থেকে মুক্তি দাও এবং আমাদের জন্য তোমার পক্ষ থেকে কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাঠাও।” (সূরা নিসা, আয়াত ৭৫)

এ স্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন—জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মুমিনরা এক দেহের মতো। দেহের একটি অঙ্গ কষ্ট পেলে পুরো দেহ কষ্ট পায়। আর মুসলমান, মুসলমানের ভাই। কোনো মুসলমান তার ভাইকে জালিমের হাতে একা ফেলে দিতে পারে না।

আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও, যেমন ঈসা (আ.) তাঁর সাহাবীদের বলেছিলেন—আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? তখন সাহাবিরা বলল, আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। পরে একদল ঈমান আনল, একদল কুফর করল। তারপর আমি ঈমানদারদের শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য করলাম, তারা বিজয়ী হল।” (সূরা সফ, আয়াত ১৪)

আল্লাহ আরও বলেন, “হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদের এমন এক ব্যবসার সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাময় শাস্তি থেকে রক্ষা করবে? তা হলো—তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনো এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে সংগ্রাম করো। এর বিনিময়ে আল্লাহ তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন, জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তোমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয় ও সাহায্য দান করবেন।” (সূরা সফ, আয়াত ১০-১৩)

আল্লাহ বলেন, “তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করো, আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, লাঞ্ছিত করবেন, তোমাদের সাহায্য করবেন এবং মুমিনদের অন্তর প্রশান্ত করবেন।” (সূরা তাওবা, আয়াত ১৪)

তিনি আরও বলেন, “অনেক ছোট দল রয়েছে যারা আল্লাহর হুকুমে বড় দলের ওপর বিজয়ী হয়েছে। আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে আছেন।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২৪৯)

এইসব আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে মুসলিম উম্মাহকে আহ্বান জানিয়েছেন—জালেমের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, নির্যাতিত ভাইদের পাশে থাকতে হবে। আল্লাহর সাহায্য তখনই আসে, যখন মুমিনরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর পথে লড়াই করে।

সবশেষে, আল্লাহর কাছে এই দোয়া করা উচিত—“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য দাও, আমাদের পা শক্ত করো এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করো।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২৫০)

এবং এই দোয়াটিও—“হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমাদের দ্বারা কোনো ভুল হয় তবে আমাদের ক্ষমা করো, আমাদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা দিও না, আমাদের দয়া করো এবং আমাদের কাফিরদের বিরুদ্ধে সাহায্য করো।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৬)

অতএব ফিলিস্তিনের ইস্যু কেবল একটি রাজনৈতিক বিষয় নয়; এটি একটি কুরআনিক আহ্বান ও ঈমানের অংশ। তাই এখনই সময়—আমরা কুরআনের নির্দেশ মেনে মজলুমদের পক্ষে বলিষ্ঠভাবে দাঁড়াই, দোয়া করি এবং সব ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের পাশে থাকি।