পাকিস্তানে ঊর্ধ্বতন ৬ জন সামরিক কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি হেলিকপ্টার নিখোঁজ হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্গতদের জন্য ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিয়েছিল হেলিকপ্টারটি। পরে সোমবার (১ আগস্ট) রাতে দেশটির বেলুচিস্তান প্রদেশে সেটি নিখোঁজ হয়।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এবং দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার রাতে বেলুচিস্তানে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি হেলিকপ্টার নিখোঁজ হয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে আইএসপিআর জানিয়েছে, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি এভিয়েশন হেলিকপ্টারের এটিসি (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল)-এর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। হেলিকপ্টারটি বেলুচিস্তানের লাসবেলায় বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিল।’
বেলুচিস্তানে বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানে থাকা পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ত্রয়োদশ কোরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সরফরাজ আলীসহ ছয় কর্মকর্তা ওই হেলিকপ্টারে ছিলেন। আবার বেশ কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তান কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আমজাদ হানিফ সাট্টিও নিখোঁজ হেলিকপ্টারটিতে ছিলেন।
সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং থেকে বলা হয়েছে, নিখোঁজ হেলিকপ্টারের খোঁজে অনুসন্ধান অভিযান চলছে এবং কোনো তথ্য পাওয়া গেলে আরও বিশদভাবে প্রকাশ করা হবে।
এদিকে নিখোঁজ হেলিকপ্টারের তল্লাশি অভিযান সম্পর্কে পুলিশের খুজদার রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক পারভেজ উমরানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনকে বলেন, পুলিশ ও সম্মুখসারির কর্মীরা গত পাঁচ ঘণ্টা ধরে যৌথ অনুসন্ধান অভিযান চালাচ্ছেন।
পুলিশ সূত্র দ্য ডনকে জানিয়েছে, যে এলাকায় হেলিকপ্টারটি নিখোঁজ হয়েছে সেটি দুর্গম পাহাড়ি ভূখণ্ড। ওই এলাকায় জীপ গাড়ি চলতে পারে এমন রাস্তাও নেই। আর এ কারণেই নিখোঁজ হেলিকপ্টারের অনুসন্ধানে উদ্ধার কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া দলগুলোর জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘হয় আপনি পায়ে হেঁটে বা মোটরসাইকেলে করে বা অথবা আকাশপথে নজরদারি চালাতে হবে।’
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বেলুচিস্তানের বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে ত্রাণ তৎপরতায় হেলিকপ্টারসহ সামরিক কর্মী ও সরঞ্জাম নিয়োজিত রয়েছে। সোমবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফও দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আখতার নওয়াজের সঙ্গে বেলুচিস্তানে ছিলেন।
এদিকে হেলিকপ্টার নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উদ্বেগ প্রকাশ এবং আরোহী সকলের সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করেছেন। ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের বহনকারী হেলিকপ্টার নিখোঁজের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, ‘আর্মি এভিয়েশনের হেলিকপ্টার নিখোঁজ হওয়ার খবর খুবই উদ্বেগজনক। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতায় নিয়োজিত কর্মীদের নিরাপত্তা ও প্রত্যাবর্তনের জন্য গোটা জাতি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে।’
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান লিখেছেন: ‘আর্মি এভিয়েশনের হেলিকপ্টার নিখোঁজ হওয়া উদ্বেগজনক এবং আরোহী সকলের জন্য প্রার্থনা করছি।’
পৃথক এক টুইটে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ ইলাহি লিখেছেন, ‘আমি আরোহীদের জন্য প্রার্থনা করছি। হেলিকপ্টারে থাকা সকল সেনা কর্মকর্তাকে আল্লাহ হেফাজত করুন।’