রোববার রাত ৮টার দিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার চাঞ্চল্যকার স্ট্যাটাস দেন চিত্রনায়িকা পরী মণি , যা ১৫ মিনিটেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেছিলেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত চিত্রনায়িকা পরী মণি।
বনানীর বাসভবনে রাত সাড়ে ১০টায় ঘটনার বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন এই অভিনেত্রী।
পরীমণি তার ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মা সম্বোধন করে ঘটনার বিচার চেয়ে চিঠি আকারে বিষয়টি ফেসবুকে উপস্থাপন করেন এই চিত্রনায়িকা।
পরীর সেই চিঠিটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘বরাবর,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমি পরীমণি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।
এই বিচার কই চাইব আমি? কোথায় চাইব? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি গত চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্রবন্ধু বেনজির আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না মা। যাদেরকে পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনা বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়!
আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কি বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মত (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পড়ে গেল) আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো।
আফসোস ছাড়া কারোর কি করবার থাকবে তখন! আমি তাদের মত চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোন অন্যায় মেনে নিতে! আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহুর্ত মাকে খুব দরকার এখন, মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্যে দরকার।
আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্যে আপনাকে দরকার মা। মা আমি বাচঁতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।
পরীমণির এই স্ট্যাটাস নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে রাতেই সাংবাদিকরা ঘটনার বিস্তারিত জানতে তার বনানীর বাসায় যায়। সেখানে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অনির্ধারিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, একটি মিটিংয়ে তিনি চার দিন আগে বোট ক্লাবে গিয়েছিলেন। সেখানে নাসির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে অশালীন আচরণ ও তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তাকে তরলজাতীয় কিছু খাইয়ে হত্যার চেষ্টাও করা হয়। সেখান থেকে তিনি বের হয়ে এসে থানায় গিয়ে অভিযোগ করলেও পুলিশ তা নেয়নি।
বিষয়ে পুলিশের গুলশান বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, গত ৮ জুন রাত সাড়ে তিনটার দিকে পরীমণি বনানী থানায় গিয়েছিলেন। এসময় তিনি কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ ছিলেন। সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ বলতে না পারা এবং এলোমেলো কথাবার্তা বলায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে সুস্থ হয়ে দিনের বেলায় আসতে বলেন। থানায় পরীমণি অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকায় পুলিশের একটি দল তাকে সেখান থেকে এভার কেয়ার হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। পরের দিন তিনি আর থানায় যাননি। এমনকি থানার ওসি বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারো সঙ্গে কথা বলেননি।
সূত্র জানায়, নায়িকা পরীমণি যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তার নাম নাসির ইউ মাহমুদ। তিনি একজন ব্যবসায়ী ও উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি ঢাকা বোট ক্লাবের পরিচালক (কালচার অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে নাসির ইউ মাহমুদের দুটি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এক পর্যায়ে দুটি নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়।