আজ ১৪৪২ হিজরির ২৬তম রমজান। আজ দিবাগত রাতে লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। হজরত আয়শা (রা.) নবিয়ে করিম (সা.) কে জিজ্ঞেস করেন যে, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.) আমি যদি ভাগ্যক্রমে শবে কদরের রাত পেয়ে যাই, তাহলে কী দোয়া পাঠ করবো। আল্লাহর রাসুল (সা.) আয়শা (রা.)কে বলেন, এই দোয়া পাঠ করিও। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্না। অর্থাত্ হে আল্লাহ তুমি বড় ক্ষমাশীল, আমাকে ক্ষমা করো।
শবে কদরের রাতে মহান আল্লাহর কাছে বেশি করে খালিছ তাওবা করা উচিত। শবে কদরের রাত থেকে অনেক মহিলা ইতিকাফে বসতে চান। তাই কোনো মহিলা যদি ইতিকাফে বসতে চান, তাহলে তার হাজবেন্ড যেন তাকে খুশি মনে ইতিকাফে বসার অনুমতি দান করেন। মহিলাদের নিজ গৃহকোণে ইতিকাফে বসতে হবে। শবে কদরের রাত থেকে অনেক পুরুষও ইতিকাফে বসতে চান। মহান আল্লাহ পাক সবার ইতিকাফ এবং মহান আল্লাহর নিকট খালিছ তাওবাকে কবুল করুন।
রাসুলে পাক সা. বলেন, লাও লাম তুজনিবু লাযাহাবাল্লাহু বিকুম ওয়া লিজায়া বিকাওমিন ইয়ুযনিবুনা ফাইয়াসতাগফিরুনাল্লাহু ফাইয়াগফিরুলাহুম। অর্থাত্ তোমরা যদি গোনাহ না করো, তবে আল্লাহ পাক তোমাদের সরিয়ে দেবেন এবং সে স্থলে এমন জাতি সৃষ্টি করবেন যারা গোনাহ করবে। অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। তখন তিনিও তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।
মহান আল্লাহর কাছে তাওবাহ করতে দেরি করা এবং গোনাহের কাজে অটল থাকা মহা বড় পাপ। তাওবা কবুল হওয়ার শর্তাবলি। এক. সংশ্লিষ্ট গোনাহের কাজটিকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা। দুই. কৃত পাপের কারণে মহান আল্লাহর কাছে লজ্জিত হওয়া। ভবিষ্যতে পুনরায় উক্ত পাপে লিপ্ত হবে না, এ কথার ওপর দৃঢ় অঙ্গীকার করা। তাওবার ক্ষেত্র চার ভাগে বিভক্ত।
এক. জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তাওবার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা। এই রকম তাওবাকে তাওবায়ে নাছুহা বলা হয়, অর্থাত্ একনিষ্ঠ দৃঢ় তাওবাহ। দুই. প্রশান্তিময় আত্মা, তাওবা করার পর মৌলিক আমলসমূহে দৃঢ় থাকবে। কিন্তু পাপাচার হতে মুক্ত হতে পারবে না। পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য সুদৃঢ় ইচ্ছা নিয়ে অগ্রসর হবে না। কিন্তু তার পরও ফিত্না থেকে বাঁচাতে পারবে না। লিপ্ত হয়েই যাবে।
যখনই এ ধরনের কিছু ঘটে যাবে অপরাধীর মতো নিজেকে লাঞ্ছনা দেবে, লজ্জিত হবে এবং পাপকাজ থেকে লিপ্ত হওয়ার যাবতীয় উপকরণ থেকে বেঁচে থাকার জন্য অঙ্গীকার করবে। একেই বলা হয় নাফছে লাউয়ামাহ বা প্রশান্তিময় আত্মা। তিন. তিরস্কারি আত্মা, তাওবাহ করে কিছু কাল দৃঢ় থাকবে।
অতএব আমরা মানবজাতি কার কখন মৃত্যু আসে সেটা আমরা জানি না। তবে সব সময়ই আল্লাহর কাছে তাওবার হালতে থাকা খুবই জরুরি। মৃত্যুর আগে ঈমান নছিবের অপর নেক আমলের নাম হলো তাওবা।
লেখক: অতিথি অনুবাদক, মক্কা আল মুকাররামাহ ও সাবেক খতিব, জাতীয় সংসদ জামে মসজিদ