নামের কিছু অংশ মিলের কারণে দীর্ঘ প্রায় ১৭ মাস হাসিনা আক্তারের সাজা ভোগ করে অবশেষে কারামুক্ত হলেন হাসিনা বেগম। আদালতের আদেশে মঙ্গলবার (৪ মে) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।
এ সময় কারাফটকে হাসিনা বেগমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, ‘নামের আংশিক মিলের কারণে দীর্ঘ প্রায় ১৭ মাস অন্যায়ভাবে হাসিনা আক্তারের সাজা ভোগ করেছেন হাসিনা বেগম। কারাগারে তিনি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি কারাগারে যাওয়ার পর তার স্বামী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। হাসিনা বেগমের ছেলে শহরে কাজ করে জীবনযাপন করছেন। তাদের পুরো পরিবার এলোমেলো হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাদের ভুলের কারণে একটি পরিবারের এতো বড় ক্ষতি হল, তাদের বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট আদালতে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করব। এছাড়া হাসিনা বেগমের ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও আদালতের কাছে নির্দেশনা চাইব।’
এর আগে আজ (মঙ্গলবার) দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ (চতুর্থ) আদালতের বিচারক শরীফুল আলম ভূঁইয়ার ভার্চুয়াল আদালত হাসিনা বেগমকে মুক্তির আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচমাস আগে হাসিনা বেগমের অন্যায়ভাবে সাজা ভোগের বিষয়টি চট্টগ্রাম মহানগর অতিরিক্ত পঞ্চম আদালতের নজরে আনেন অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ। এরপর আদালত বিষয়টি কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন।
কিন্তু একের পর এক ধার্য তারিখ পেরিয়ে গেলেও পুলিশ প্রতিবেদনটি দাখিল করতে বিলম্ব করছিল। একপর্যায়ে আদালত এ বছরের ২২ মার্চ তারিখে পরের ৮ এপ্রিলের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশকে আদেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে টেকনাফ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) খোরশেদ আলম বিষয়টি তদন্ত করে ৬ এপ্রিল আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, হাসিনা বেগম ও হাসিনা আক্তারের নাম-ঠিকানা একই পাওয়া যায়। তবে পূর্বে গ্রেফতার হওয়া হাসিনা আক্তারের দুই সন্তান ছিল এবং বর্তমানে কারাগারে থাকা হাসিনা বেগম তিন সন্তানের জননী। তাদের বয়স ও ছবির মধ্যে পার্থক্য এবং উভয়ের স্বামী, পিতা-মাতার নামে কোনো মিল নেই।
পুলিশ প্রতিবেদনসহ রোববার (২ মে) বিষয়টি অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক শরীফুল আলম ভূঁইয়ার ভার্চুয়াল আদালতে শুনানি হয়। সেদিন শুনানি শেষে আদালত চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে কারাগারের ছবিযুক্ত নথি দেখে আরেকটি প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, আদালতের আদেশে কারা কর্তৃপক্ষ আজ প্রতিবেদন দাখিল করে। সেই প্রতিবেদনেও হাসিনা আক্তার ও হাসিনা বেগম ভিন্ন এবং তাদের ছবি মিল নেই বলে উল্লেখ করা হয়। কারাগারের প্রতিবেদন ও পুলিশের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে হাসিনা বেগমকে আজ মুক্তির আদেশ দেন আদালত।
আদলত সূত্রে আরও জানা গেছে, দুই সন্তানসহ হাসিনা আক্তার নামে এক নারী ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের কর্ণফুলী থানায় মাদক মামলায় কারাগারে যান। একই বছর ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি।
এরপর ২০১৯ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর পঞ্চম আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী ওই মামলায় হাসিনা আক্তারকে ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। এছাড়া জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
রায় ঘোষণার পর ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে টেকনাফ থানা পুলিশ হাসিনা বেগমকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করেন। সেই থেকে তিন সন্তানের জননী হাসিনা বেগম কারাভোগ করছেন।