নওগাঁয় সিডলেস লেবু চাষ করে সফলতা পেয়েছে বেশ কয়েকজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। তাদের মধ্যে একজন ধামইরহাটের হাবিবুর রহমান। কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে শুরু করেন কৃষি খামার।
বর্তমানে মাত্র ৩৩ শতাংশ জমিতে লেবু চাষ করে বছরে প্রায় ৮ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। ইতিমধ্যে গ্রামের শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার যুবকরা হাবিবুর রহমানকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।
জানা গেছে, উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত দক্ষিণ শিববাটি গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান। কৃষি বিষয়ে বিএজিএড পাস করার পর চাকরির পেছনে না ছুটে নিজের অর্জিত জ্ঞান ও প্রাতিষ্ঠানিক লদ্ধ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০১৬ সালে নিজ গ্রামের দক্ষিণ পাশে ৩৩ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল বারোমাসী সিডলেস জাতের ২৩১টি লেবুর চারা রোপণ করেন।
লেবুর চারা, বাগান বেড়া দিয়ে ঘেরা এবং শ্রমিকের মজুরি বাবদ তার মোট খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ২০১৭ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে ওই বাগান থেকে লেবু ও চারা বিক্রি শুরু হয়। প্রথম বছর ২০ হাজার, দ্বিতীয় বছর ৪০ হাজার, তৃতীয় বছর প্রায় ১ লাখ টাকার লেবু বিক্রি হয়। সবচেয়ে বেশি গত বছর করোনাকালে লেবু বেশি বিক্রি হয়েছে।
২০২০ সালে রমজান মাস এবং করোনার জন্য প্রতি পিচ লেবু বাগান থেকে পাইকারি হিসেবে ৫ টাকা দরে বিক্রি করে মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় হয়েছে। লেবু চাষে তেমন শ্রম দিতে হয় না। তাছাড়া এর রোগ বালাই অনেক কম। সহজে যে কেউ লেবু চাষ করতে পারে। বর্তমানে তার বাগানের গাছে থোকায় থোকায় লেবু ধরেছে। একদিকে লেবু উঠানো হচ্ছে, অন্যদিকে প্রচুর ফুল আসছে।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হাবিবুর রহমান বলেন, চলতি বছরে তার বাগান থেকে পর্যায়ক্রমে ৮০ হাজার পিচ লেবু বিক্রি করা হবে। প্রতি পিচ লেবু ৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে ৮০ হাজার লেবুর পাইকারি বাজার দর ৪ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে বাগান থেকে পাইকাররা লেবু ক্রয় করছে।
এছাড়া তার বাগানে প্রায় ৯ হাজার লেবুর চারা করা হয়েছে। প্রতি পিচ চারা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে ৯ হাজার চারা বিক্রি করে পাওয়া যাবে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বাগানে এবার তার খরচ হয়েছে ৮০-৯০ হাজার টাকা। এ বছর এ বাগান থেকে তার আয় হবে প্রায় সাড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। তার বাগানের লেবুর চারার চাহিদা ব্যাপক বেড়ে চলেছে।
বিশেষ করে এ লেবুর কোনো বিচি থাকে না, লেবুর চামড়া পাতলা এবং প্রচুর পরিমাণে রস থাকে। যার কারণে এর চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষের এ জাতের লেবুর চারা তার কাছ থেকে সংগ্রহ করছে। তার বাগানের ব্যাপক পরিচিতি পাওয়ায় এলাকার শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার যুবকরা তার সহযোগিতা নিয়ে অনেকে লেবু এবং লিচু বাগান তৈরি করেছেন। তারা বাগান থেকে মুনাফা পেতে শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাপলা খাতুন বলেন, সিডলেস এ লেবুর প্রচুর রস এবং সুগন্ধী। কৃষিবিভাগ থেকে প্রযুক্তিগত দিকসহ তাকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া লেবুর মার্কেট তৈরি এবং চারা গাছ বিক্রি করতে কৃষি বিভাগ থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে।