দ্রুতগতিতে কাজ করে পদ্মা সেতু চালুর চিন্তা

0
42
পদ্মা সেতু

নির্ধারিত সময়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করতে দিনরাত একাধিক শিফটে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, বাস্তবায়নযোগ্য এবং সময়ভিত্তিক একটি কর্মপরিকল্পনা এবং সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করতে হবে। এদিকে মূল সেতুর কাজ শেষ করতে আগামী বছর জুন এবং সামগ্রিক সব কাজ শেষ করতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি পদ্মা সেতু পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আইএমইডি। এতে বলা হয়, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন পর্যায়ে এখন আর কোনো কারিগরি সমস্যা নেই। এ কারণে প্রকল্প এলাকায় প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক লোকবল কাজে লাগিয়ে ২৪ ঘণ্টা কাজ চলমান রাখতে হবে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই যথাসম্ভব কাজ এগিয়ে নিতে হবে। বর্ষায় নদীতে অতিরিক্ত স্রোতের কারণে কাজ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে সময়মতো বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্ভব না হওয়ায় পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণের সময় বাড়ছে আরও এক বছর। ব্যয় না বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দও প্রায় অর্ধেক কমিয়ে আনা হচ্ছে। দুই হাজার ৯০১ কোটি টাকা বরাদ্দ কমতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অতিগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটির সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাপকভাবে সংশ্নিষ্ট। এরকম একটি বড় প্রকল্পে যেরকম জনবল একত্র করা প্রয়োজন পরিদর্শনে তা দেখা যায়নি। প্রকল্পটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এ-সংক্রান্ত অন্যান্য কমিটির কার্যক্রমও জোরদার করতে হবে। এসব সুপারিশের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা এক মাসের মধ্যে আইএমইডিকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। করোনার কারণে কাজের গতি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চীনসহ পৃথিবীর ১৮ দেশের প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন এখানে। করোনায় এসব দেশের অনেকেই এখনও ঢাকায় ফিরতে পারেননি। স্থানীয়ভাবে এসব বিশেষজ্ঞ জনবলের জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণেই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।

আইএমইডির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মার সার্বিক অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মূল সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। তবে পিছিয়ে আছে নদীশাসন। অগ্রগতি মাত্র ৬২ শতাংশ। বাস্তব এই চিত্রের পরিপ্রেক্ষিতেই রাতদিন একাধিক শিফটে কাজ করার সুপারিশ করা হয়েছে আইএমইডির প্রতিবেদনে।

সময় বাড়ছে আরও এক বছর: পদ্মা সেতু প্রকল্পের সামগ্রিক নির্মাণকাজ শেষ করতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সেতু বিভাগ। পরিকল্পনা কমিশনে সময় বাড়ানোর এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়নি। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকাই বহাল আছে।

তবে মূল সেতুর কাজ শেষ করতে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে। মূল সেতুর কাজ শেষে পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে। পরবর্তী আরও এক বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সামগ্রিক অন্যান্য কাজ করা হবে। অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে ডিফেক্ট লায়াবেলিটি পিরিয়ড বা নির্মাণ শেষে কোনো ত্রুটি, প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়বদ্ধতার জন্য অতিরিক্ত এক বছর সময় চাওয়া হয়েছে।

এডিপি কাটছাঁটে পদ্মার বরাদ্দ কমছে: এদিকে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি আরএডিপিতে পদ্মা সেতুর বরাদ্দ কমছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, পদ্মার বরাদ্দ কমছে ২ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে পদ্মা সেতুর বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সংশোধন করে ২ হাজার ৯৯ কোটি টাকা করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা বিভাগের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রতি বছর এডিপি কাটছাঁট করা হয় সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে। এ বছর সেতু বিভাগ বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। সেভাবেই বরাদ্দ কমানোর প্রক্রিয়া করছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এডিপি সংশোধন করা হবে। বৈঠকের তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে সূত্র জানিয়েছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এই বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।