করোনা ভাইরাসের ভীতিকর ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশেও পাওয়া গেছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সম্প্রতি ভারতফেরত কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষা করে ছয় জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করেছে। ইতিমধ্যে প্রায় দুই ডজন দেশে করোনা ভাইরাসের এ ধরনটি পৌঁছে গেছে, তাতে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
টিকা নেওয়ার পরেও টিকার সুরক্ষা দেয়াল ফাঁকি দিয়ে সংক্রমিত করতে পারে এই ভ্যারিয়েন্ট। নতুন এ ভ্যারিয়েন্ট এক সাথে অনেক মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানা। বিভিন্ন ধরনের গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে শুধুমাত্র সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করলেই শতভাগ নিরাপদ থাকা যায়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো এই কাজটিও অনেকই করছেন না। ঈদকে সামনে রেখে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মানুষ গ্রামে যাচ্ছে। ভয়ের বিষয় হলো: সংক্রমিত মানুষজন গ্রামে গিয়ে অন্য মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। আবার তারাও ঢাকায় এসে আরো অনেক মানুষকে সংক্রমিত করবে। যানবাহনেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বাস চলাচল করছে না, কিন্তু মানুষ ঠিকই ভেঙে ভেঙে কিছুটা পথ মোটর সাইকেল, সিএনজি ও প্রাইভেট কারে কওে আবার কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে যাচ্ছে গ্রামের বাড়িতে। রাজধানীসহ সারা দেশে দোকানপাট ও শপিংমলে উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সৃষ্টিকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। কারণ, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট খুবই ভয়াবহ এবং দ্রুত ছড়ায়। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। নইলে সামনে ভয়াবহ বিপদ।
তারা বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ সীমান্ত ভারতের সাথে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে দেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অবৈধ পথে নওগাঁ, সিলেট, যশোরসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনেকে ভারতে যাচ্ছে-আসছে। এটা ঠেকানো যাচ্ছে না। এ কারণে দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। প্রতিরোধের একটাই উপায় মাস্ক পরা। ঈদে মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাবে। এটা ঠেকানো যাবে না। গতবারও ঈদের সময় মানুষের স্রোত ছিল গ্রামমুখী। এবার অভিন্ন চিত্র। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু করা সম্ভব।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে আসতে না পারে সেজন্য সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছে। তারপরও মানুষ অবৈধ পথে সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করছে। আমরা বারবার স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলছি। কিন্তু কেউ তা শুনছে না। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে। আমাদের দেশে যেভাবে সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে না, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না তাতে তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। তিনি বলেন, এখনই সবার সতর্ক হতে হবে। বেঁচে থাকলে ঈদ করা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি মানলে যত ভ্যারিয়েন্ট আসুক কোনো সমস্যা হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, বিদেশ থেকে যারা আসছেন তারা কোয়ারেন্টাইন মানে না। বিদেশে গেলে মানে, কিন্তু দেশে আসলে মানতে চায় না। বিভিন্ন মহল থেকে তদ্বির আসে। শেষ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন ছাড়াই ছেড়ে দিতে হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে ভয়াবহ বিপদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যেহেতু চলে এসেছে, তাই এখনই সতর্ক হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। নইলে সামনে ভয়াবহ বিপদ আসবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, আমরা আগে থেকেই সতর্ক থাকতে বলেছি। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য সবার স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।