
“১৯২১ সালের ১ লা জুলাই বিজ্ঞান, কলা ও আইন ৩টি অনুষদের অধীনে তিনটি আবাসিক হল, ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক ও ৮৪৭ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।”
ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অবধারিত ছিল। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে সে সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা সফরে আসায় কিছু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি তার সাথে সাক্ষাৎ করে বঙ্গভঙ্গ রদের কারণে তাদের ক্ষতির কথা জানান। বঙ্গভঙ্গ রদের ‘রাজকীয় ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। যেটাকে লর্ড লিটন ‘স্প্লেনডিড ইম্পিরিয়াল কমপেনসেশন’ বলেছিলেন।
সে সময়ের ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ সরকারের পরিত্যক্ত ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন স্যার নবাব সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব করেন ব্যারিস্টার আর. নাথানের নেতৃত্বে ডি আর কুলচার, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, নওয়াব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার প্রভাবশালী নাগরিক আনন্দ চন্দ্র রায় প্রমুখ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তারা হলেন- হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ. সি. টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, জি এইচ ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ এ জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, এ এফ রহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর ১৯৬১ সালের আইয়ুব সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন।
একপর্যায়ে মাতৃভাষার দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, স্বৈরশাসক আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বাঙালির প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা।