প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেছেন রাজধানী ঢাকা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বলে।
রোববার (৬ মার্চ) ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ-১) শীর্ষক প্রকল্পের বাস্তবায়নাধীন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নাগরিক সুবিধা এবং কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকার উপর মানুষের চাপ বাড়ছে। ফলে রাজধানী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ঢাকা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। ঢাকাকে যখন সিটি করপোরেশন করা হলো, তখন মানুষের চাপের কারণে নাগরিক সেবা ঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। যে কারণে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘একটা মাত্র সিটি করপোরেশন ছিল। অথচ জনসংখ্যা তো বিশাল। একটা সিটি করপোরেশন দিয়ে এতগুলো মানুষের সেবা দেওয়া অসম্ভব ছিল। যে কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এর আশেপাশের ইউনিয়নগুলো যেগুলো ঢাকা সংলগ্ন অথচ তারা নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে না, সেই মানুষদের যুক্ত করে ঢাকাকে দুই ভাগে ভাগ করা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা শহর এক সময় ছিল ছোট শহর। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা দিয়ে ঘেরা। ভৌগোলিক পরিবেশ ও স্বাধীন দেশের রাজধানী হিসেবে এর গুরুত্ব বেড়ে যায়। জনসংখ্যা বেড়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল তৃণমূলের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূল পর্যায় থেকে যেন উন্নয়ন আসে সে চেষ্টা তিনি করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ফলে ধীরে ধীরে মানুষ রাজধানীমুখী হয়ে পড়ে কর্মসংস্থানের জন্য। চাপটাও বেড়ে যায়।
রাজধানীর বাইরে নাগরিকদের বসবাসের পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আর ঢাকায় যাদের কর্মক্ষেত্র তাদের আসা-যাওয়ার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে একটা বাড়ি বা ফ্ল্যাট না থাকলে জীবন বৃথা এই চিন্তা নাগরিকদেরকে মাথা থেকে সরিয়ে দিতে হবে। আমরা রাস্তার উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছি। খুব সহজেই ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে পারবেন এমন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করে দিচ্ছি। এক্ষেত্রে ঢাকার বাইরে স্থায়ী ঠিকানা খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন চারবারের সরকারপ্রধান।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, গুলশানে বিজিএমসির প্রায় ১০ বিঘা জমিতে একটি খেলার মাঠ করা হবে।
গুলশান, বনানী ও বারিধারার মতো উন্নত এলাকার বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘গুলশানে জায়গা পাওয়া মুশকিল। বড়লোকের জায়গা, সব পয়সাওয়ালা লোক। আমার কিছু অভিযোগ আছে, কেউ এক ইঞ্চি জায়গা ঠিকমতো ছাড়েনি। দুইটা বাড়ির ভেতর এমন চাপা জায়গায় থাকে, আবার সেখানে ময়লা ফেলা হয়। রান্না ঘরের ময়লা তারা জানালা দিয়ে ছুড়ে মারে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আনিসুল হককে নির্দেশনা দেওয়ার পর তিনি কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল উল্লেখ করে বর্তমান মেয়র মো. আতিকুল ইসলামকেও এ বিষয়ে নজর দিতে নির্দেশনা দেন তিনি।
নগরে রাস্তা করার সময় ফুটপাত যেন ঠিকভাবে রাখা হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে প্রকৌশলীদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহর গড়ে উঠে গেছে। এরমধ্যে যতটুকু সুন্দর করা যায়। এই ১৮টা ওয়ার্ডকেও যতটুকু সম্ভব সুন্দর করা যায়।’
শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, উত্তর সিটিতে সর্বশেষ সংযুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের জন্য হাতে নেওয়া ‘অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ-১)’ প্রকল্পের মাধ্যমে এসব এলাকার নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন হবে।
রাজধানীর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসনের জন্য সরকারের নেওয়া উদ্যোগের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরে যারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী এরইমধ্যে তাদের জন্য অনেকগুলো ফ্ল্যাট নির্মাণ শেষ হয়েছে। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসনের টাকা লোপাট করেছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বস্তিবাসীদের জীবন-যাপন সুন্দর করতে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ফ্ল্যাটে বস্তিবাসী ভাড়ায় থাকবেন। তারা চাইলে প্রতিদিন, চাইলে সপ্তাহে কিংবা মাসে ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন। বস্তিবাসীর জীবনমান এবং তাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মানের সঙ্গে চলবে, বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলবে।