
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টিতে ইতিহাস গড়লো পাকিস্তান। ভারতের মত শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীকে তারা বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হারিয়ে দিলো ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
টি-টোয়েন্টিতে ভারতের ছুঁড়ে দেয়া ১৫২ রানের লক্ষ্য কোনো উইকেট না হারিয়েই পার হয়ে যান পাকিস্তানের দুই ওপেনার বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান। হাতে তখনও বাকি ছিল ১৩টি বল। ৫৫ বলে ৭৮ রানে অপরাজিত ছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং ৫২ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন বাবর আজম।
ওয়ানডেতে তো নয়-ই ভারতকে কখনো টি-টোয়েন্টিতে ১০ উইকেটে হারাতে পারেনি পাকিস্তান। ১৯৮৩ সালে ফয়সলাবাদে মাত্র ৭ রানের টার্গেটে পাকিস্তান ১০ উইকেটে জিতেছিল। ৩৮ বছর পর ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়ে বিজয়ের ঝাণ্ডা উড়াল পাকিস্তান। একই সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাকিস্তান প্রথমবার ১০ উইকেটে জিতল।
একতরফা দাপট দেখিয়ে পাকিস্তান জিতেছে। যেমন বোলিংয়ে, তেমন ব্যাটিংয়ে। টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে ১৫১ রানে আটকে রাখে। লক্ষ্য তাড়ায় বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান বুঝিয়ে দিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিস গেইল বা আন্দ্রে রাসেলদের মতো হার্ডহিটারদের খেলা নয়। ক্লাম, কুল, ক্যালকুলেটিভ হয়ে সহজে লক্ষ্য তাড়া করেছেন দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
বাবর আজম ৫২ বলে ৬৮ রান করেছেন। রিজওয়ান ৫৫ বলে করেছেন ৭৮। বাউন্ডারিও যেন হিসেব করে মেরেছেন। বাবরে ব্যাট থেকে আসে ৬ চার ও ২ ছক্কা। রিজওয়ান মেরেছেন ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা। ব্যাটিংয়ে এক মুহূর্তের জন্য জড়তা ছিল না। পাওয়ার প্লে’তে রান ৪৩, ১০ ওভারে ৭১। শেষ ১০ ওভারে দরকার ছিল ৮১ রান। মাঝে ২ ওভারে ১৬ ও ১২ রান তুলে কাজটা সহজ করে নেন দুজন। এরপর ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়িয়ে ১৩ বল আগেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেন তারা।
এর আগে পাকিস্তানের বোলিংও ছিল নিয়ন্ত্রিত। শুরুটা করেছিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। বল হাতে শুরুর দুই ওভারেই রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলের উইকেট নেন। শুরুর ধাক্কার পরপরই হাসান আলী তুলে নেন সূর্যকুমার যাদবের উইকেট। কিন্তু ব্যাট হাতে পাকিস্তানের আক্রমণের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তার ৫৭ রানের ঝকঝকে ইনিংসে শেষ পর্যন্ত লড়াকু পুঁজি পায় ভারত।
৪৫ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার পর কোহলি হাত খুলে খেলা শুরু করেন। কিন্তু তার ইনিংসটি বড় করতে দেননি সেই শাহীন আফ্রিদিই। স্লোয়ার বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে টাইমিং মিস করে কোহলি উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। ৪৯ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি।
ভারত নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও রান রেট কখনো ছয়ের নিচে নামতে দেয়নি। পাওয়ার প্লে’তে রান ৩ উইকেটে ৩৬। ১০ ওভারে রান ৬০ রান। রোহিত (০) ও রাহুল (৩) আউট হওয়ার পর যাদব ১টি করে চার ও ছক্কায় ১১ রান করেছিলেন। কিন্তু হাসান আলী তাকে প্রথম ওভারেই আউট করেন।
চতুর্থ উইকেটে কোহলিকে সঙ্গ দেন পান্ত। দুজনের ৪০ বলে ৫৩ রানের জুটিতে রানের চাকা সচল থাকে। পান্ত স্বভাবসুলভ করে ৩০ বলে ৩৯ রান করে আউট হন। এরপর জাদেজা ১৩ বলে করেন ১৩ রান। জাদেজার সঙ্গে ৪১ রানের জুটির ২৭ রান একাই করেন কোহলি।
ভারতের অধিনায়ককে ফিরিয়ে রানের চাকায় লাগাম টেনেছিলেন আফ্রিদি। কিন্তু শেষ ওভারে ১৭ রান খরচ করে নিজের বোলিং ফিগার নষ্ট করেন। ৩১ রানে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার। ৪৪ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন হাসান আলী।