জেলা-উপজেলায় সিনেপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে : প্রধানমন্ত্রী

0
68
জেলা-উপজেলায় সিনেপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে : প্রধানমন্ত্রী
জেলা-উপজেলায় সিনেপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে : প্রধানমন্ত্রী

সারা দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় বিনোদনের জন্য সিনেপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। আমাদের সিনেমা শিল্পটাকে আমি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন করতে চাই। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত মানুষের বিনোদনের একটা মাধ্যম হিসেবে সিনেমা দেখাতে চাই। সে ক্ষেত্রে আমি তাদেরকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছিলাম।

এজন্য আমরা এক হাজার কোটি টাকার একটা ফান্ড তৈরি করে রেখেছি। আমি চাই আমাদের জেলা-উপজেলায় সব জায়গায় এই সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হোক। যেখানে আধুনিক প্রযুক্তিতে চলচ্চিত্র দেখানো যায়।’

বুধবার দুপুরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার-২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন তিনি।

চলচ্চিত্র শুধু বিনোদন নয়, সমাজ সংস্কারের মাধ্যম বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, `সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, আমাদের সমাজ সংস্কারেও একটি মাধ্যম। মানুষকে শিক্ষা দেওয়া বা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা এবং এ দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।‘

তিনি বলেন, এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে আমি এই আহ্বান জানাব, আপনারা যারা শিল্পী কলাকুশলী আছেন তারা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন, আমাদের গণমানুষের যে আত্মত্যাগ, আমাদের যে এগিয়ে চলার পথ, সেটা যেন মানুষের কাছে আরো ভালো ভাবে উপস্থাপন হয়, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ যেন সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বা নতুন প্রজন্ম যেন নিজেদের জীবনকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে। সেই ভাবেই আপনারা সিনেমাগুলো তৈরি করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করবেন সেটাই আমি চাচ্ছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং আমাদের এই শিল্প আরো এগিয়ে যাবে, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, আমাদের তরুণ সম্প্রদায় যারা এগিয়ে এসেছে এই সিনেমার শিল্পে তাদের কে আমি বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এরাই তো ভবিষ্যৎ।’

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এফডিসি করে দিয়ে যান এবং চলচ্চিত্র যেন হয় সে ব্যবস্থা তিনি করে দিয়েছিলেন।

যে সকল শিল্পীরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছিলেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমাদের যারা চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, আমাদের শিল্পী, কলাকুশলী, আমাদের শিল্পীরা যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

শেখ হাসিনা জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এ শিল্পের বিকাশ ঘটে এবং স্বাধীনতার পর পর বঙ্গবন্ধু এ শিল্পের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। জাতির জনক সবসময় এ শিল্পের প্রতি উৎসাহিত করতেন বলেও জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় চেষ্টা করেছি যে আমাদের দেশে সিনেমা শিল্পটা যেন শেষ হয়ে না যায়। আমি একসময় এসে দেখেছি খুবই করুণ অবস্থা ছিল। এফডিসি যেখানে ছিল সেখানে আজকে যে রাস্তাটা আছে সে রাস্তায় ছিল না। আমি যখন তেজগাঁও এলাকায় ১৯৮৪ সালে সংসদ সদস্য ছিলাম তখন ওই রাস্তা তৈরি করার ব্যবস্থা নিয়েছি।‘

`১৯৯৬ সালের সরকারে আসার পরে যা যা করা দরকার সবই করেছিলাম। আবার দেখলাম যে আবার সবকিছু অনেক পিছনে চলে গেছে। আবার পরবর্তীতে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ভালো একটা সুন্দর সিনেপ্লেক্স তৈরি করার। সেটা নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। একটু দেড়ি হয়ে গেছে কিন্তু হয়েছে।’

সিনেমা শিল্প একটা সময় অনেক ‘বাধাগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এতে সবাই খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। আমি চাই যে, এই শিল্পটা গড়ে উঠুক।’

শিল্পী ও সংশ্লিষ্টদের জন্য আর্থিক সায়তার উদ্যোগের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার শিল্পী, কলাকুশলী সকলে যাতে সুযোগ পায় তার জন্য ফান্ড ট্রাস্ট তৈরি করে দিয়েছি। আমি চাই যারা বিত্তবান তারা ফান্ডে আরো বেশি করে টাকা রাখেন। আমি দেখেছি, আমাদের অনেক শিল্পীরা যখন বৃদ্ধ হয়ে যায় বা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাদের একটা করুন অবস্থা হয়। আমার আহ্বান থাকবে যারা বিত্তশালী আছেন তারা এই ফান্ডের টাকা রাখবেন বেশি করে। যাতে করে কোনো শিল্পী যেন কষ্ট না পায়।’

চলচ্চিত্রের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র আমাদের জীবনের চিত্র। আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা দেখেছি ইতিহাসের সাক্ষী চলচ্চিত্র। চলচিত্র সমাজ সংস্কার করতে পারে। সমাজ সংস্কারের এই চলচ্চিত্রের বিরাট অবদান রাখতে পারে, যা মানুষের মনে দাগ কাটে। জীবন দর্শন এটাই।

এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে অনেক বার্তা পৌঁছে দেয়া যায়। ইতিহাসের বার্তা বাহক চলচ্চিত্র। ইতিহাসে ধরে রেখে অনেক অজানাকে জানার সুযোগ করে দেয়, অনেক হারিয়ে যাওয়া ঘটনা সামনে নিয়ে আসে। যা জীবনের সাথে মিশে যায়।

ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার জন্য বা সমাজের অনেক ধরনের অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খলতা দূর করতে চলচ্চিত্র বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েই আমাদের দেশ ও জাতির প্রতি মানুষের যে দায়িত্ববোধ, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা সেগুলো প্রকাশ করতে পারি। সে দিক দিয়ে চলচ্চিত্রের অবদান রয়েছে।’