নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও দলটির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করেছে সরকার। একই সাথে প্রজ্ঞাপনের পর ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের সন্ত্রাস-নাশকতা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ।
স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটি নিষিদ্ধ করে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, পরে প্রজ্ঞাপনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
গেজেটে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াত-ই- ইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির-কে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধে দায়ী হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
এছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের এক রিট পিটিশনের রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছেন। আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগের ওই রায়কে বহাল রেখেছেন বলে গেজেটে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল। সরকার বিশ্বাস করে যে, জামায়াত ও শিবিরসহ এর সব অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
তাই ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮(১) এ দেওয়া ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো। এ আইনের তফসিল-২ এ জামায়াত ও ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসেবে তালিকাভুক্ত করলো ফলে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
বুধবারের মধ্যে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা হচ্ছে বলে এর আগে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। যদিও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগায় বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।
এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রস্তাব লেজিসলেটিভ বিভাগ ভেটিং (আইনি মতামত) করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখান থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল জামায়াত। মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় দলটির সাবেক বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাজা হয়েছে। গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের পর মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা এবং মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মতো পাঁচ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলার রায়ে জামায়াতকে একটি ‘ক্রিমিনাল সংগঠন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, জামায়াত একটি অপরাধী সংগঠন। একাত্তরে তাদের ভূমিকা ছিল দেশের স্বার্থের পরিপন্থি।
বাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল জামায়াত। রাজনৈতিক নানান পট পরিবর্তনের পর দেশের রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয় দলটি। ১৯৮৬ সালে প্রথম বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নেয় জামায়াত। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে জামায়াতের কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভায় স্থান পান, যা তখন ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।