স্বাস্থ্যসম্মত নেপিয়ার বা পাকচং ঘাস গরু, ছাগল, মহিষসহ গবাদি পশুর উপকারী ও উৎকৃষ্ট খাদ্য। গরু-ছাগলের বেশি দুধের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে এ ঘাস। প্রোটিন-সমৃদ্ধ এ ঘাস পশুর খাদ্য চাহিদা মেটাতে সক্ষম। ফলে খামারিদের কাছে এ ঘাসের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা থাকায় খামারিদের অনেকে নিজেদের প্রয়োজনে চাষ করেন, আবার অনেকে ব্যবসার জন্য নেপিয়ার বা পাকচং ঘাস চাষ করে লাভবান হয়েছেন।
শুধু এ ঘাস চাষ করেই দিনাজপুর সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ এলাকার কৃষক মিলন, মশিউরসহ অনেকেই আজ স্বাবলম্বী। নেপিয়ার বা পাকচং ঘাসের প্রচুর চাহিদা থাকায় ভ্যানে করেও এ ঘাস বিক্রি করতে দেখা যায়। একবার চারা রোপণ করলে পাঁচ বছর ধরে ক্রমানুসারে চারা গাছ হতে থাকে। অর্থাৎ ঘাস বড় হলে কাটার পর আবার ঘাসের মুড়া থেকে চারা উঠতে থাকে। তাই অনেক কৃষক পাকচং ঘাস চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
কৃষক মিলন বলেন, ‘প্রায় ১১ বিঘা জমি লিজ নিয়ে নেপিয়ার বা পাকচং ঘাস চাষ করেছি। জমিতে ইউরিয়া, পটাশ, ড্যাব ও সালফার সার ব্যবহার করতে হয়। জমিতে প্রচুর পানি লাগে। ফলন ভালো। জমিতে চারা লাগানোর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ঘাস কাটার উপযোগী হয়। পূর্ণাঙ্গ ঘাসটি ৫ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। বছরে পাঁচ-ছয় বার ঘাস কাটা যায়।
প্রতিবারে বিঘাপ্রতি ঘাস উৎপাদনে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয় এবং বিক্রি করে ১৫-১৮ হাজার টাকা আয় হয়। প্রতি আঁটি ঘাস বিক্রি ৭-৮ টাকা দরে। কিন্তু শীত মৌসুমে ঘাসের দাম বেশি থাকে। আর প্রতি বছর ১ বিঘা জমি লিজ নিতে ১৫-১৬ হাজার টাকা জমির মালিককে দিতে হয়। এর পরও এটা লাভজনক।’
আরেক কৃষক চিরিরবন্দর উপজেলার হাটখোলা গ্রামের মশিউর রহমান বলেন, ‘১৫ বছর যাবৎ খালাতো ও চাচাতো ভাই এর চাষ করেন। শেখপুরা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ঘাস চাষ করেছি। ৫৪ হাজার টাকা প্রতি বছর জমির মালিককে দিতে হয়। ছয়-সাতটি ঘাস দিয়ে তৈরি আঁটি বিক্রির উপযোগী হয়। ঘাসের চারাও বিক্রি হয় প্রতি বস্তা ৬০০ টাকা দরে। ওগুলো ঘাসের মুড়া।’ তিনি আরও জানান, সদরে ৯ ও চিরিরবন্দর উপজেলায় নিজ এলাকায় আরও ৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পাকচং ঘাস চাষ করছেন।
চিরিরবন্দরে নেপিয়ার ঘাসের চাষ বেশি হয়। এ ব্যাপারে দিনাজপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. আবদুর রহিম বলেন, ‘অনেক কৃষক পাকচং ঘাস চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ ঘাসে রয়েছে প্রায় ১৪% প্রোটিন। স্বাস্থ্যসম্মত উৎকৃষ্টমানের এ ঘাস পশুখাদ্যের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।’ তিনি আরও জানান, সদর উপজেলাতেই প্রায় ৩০ একর জমিতে পাকচং ঘাস চাষ হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে পাকচং ঘাস চাষে কৃষককে বিনামূল্যে চারা সরবরাহ করা হয় এবং ঘাস চাষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।