
ক্রুসিকা নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে একটি ছোট জলবিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করতে চলেছিল বসনিয়া সরকার। কিন্তু এ প্রকল্পের পরিবেশগত ঝুঁকি বুঝতে পেরে বাধা হয়ে দাঁড়ান মায়িদা বিলাল নামে এক নারী। এর জন্য তাকে পিটুনি খেতে হয়েছে, শিকার হয়েতে হয়েছে নানা হয়রানির। এরপরও হার মানেননি। গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে টানা ৫০০ দিনের বেশি পাহারা দিয়েছেন প্রকল্পের নির্ধারিত জায়গা। তাদের বাধার মুখে শেষপর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সেই লড়াইয়ে জয়ী হয়েছিলেন মধ্য বসনিয়ার বাসিন্দা মায়িদা। তবে আজও বলকান দেশটি জুড়ে ওই ধরনের জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ আটকানোয় তার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আর এই লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি ‘গ্রিন নোবেল’ নামে পরিচিত একটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, মায়িদা বিলালকে ২০২১ সালের গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজের ইউরোপীয় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ছয়টি অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ে পরিবেশবাদী অগ্রদূতদের এই সম্মাননা দেয়া হয়ে থাকে।
মায়িদা বিলাল রয়টার্সকে বলেন, আমরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সশরীরে টানা ৫০৩ দিন নদীকে রক্ষা করেছি। দরকার হলে আরও ৫ হাজার ৩০০ দিন তাকে নিরাপত্তা দেব।
জানা যায়, ২০১৭ সালের গ্রীষ্মে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জায়গায় যাওয়ার পথে একটি কাঠের সেতুর ওপর ভারী যন্ত্রপাতি আটকে দেয় গ্রামবাসী। তাদের দাবি, ওই প্রকল্প পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করবে।
মায়িদা জানান, এর জন্য তাদের ওপর পুলিশ আক্রমণ করে এবং জোরপূর্বক ওই জায়গা থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু এরপরও তারা লড়াই চালিয়ে যান। প্রায় দেড় বছর পর প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। পরে সেই সেতুটিকে মায়িদার নামে নামকরণ করে গ্রামবাসী।
৪০ বছর বয়সী এ নারী বলেন, আমি চাকরি হারিয়েছি, বন্ধুবান্ধব হারিয়েছি, আমার মেয়েকে স্কুলে হয়রানি করা হয়েছে। যদি বলি কাজটা সহজ ছিল, তাহলে মিথ্যা বলা হবে। এত কিছু সত্ত্বেও আমি তা করেছি। আমার একটা মেয়ে রয়েছে আর আমি চাই না বড় হয়ে সে মায়ের মতো একই সমস্যায় পড়ুক।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও মায়িদার এমন অনন্য সাহসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। তাদের মতে, এ ধরনের দৈনন্দিন নায়কেরাই আমাদের গ্রহকে রক্ষার লড়াইয়ে তৃণমূল পর্যায়ের শক্তি।