
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নে পুত্রসন্তান রেজওয়ান ইসলাম (১৯)কে ফিরে পেতে এবং মানব পাচারকারী চত্রুের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে ১৬জুলাই বুধবার বেলা ১১টায় জলিরপাড় বাজারের নিজ বাড়ীতে মা হাসিনা বেগম সংবাদ সম্মেন করেছেন।
হাসিনা বেগমের পক্ষে তার ছোট বোন লাবনী আক্তার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন। লাবনী আক্তারের লিখিত বক্তব্যে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের জলিরপার বাজারের মৃত আবুল কাসেম শেখের স্ত্রী হাসিনা বেগম, তাঁর দুইটি সন্তান হোসাইন মানিক ও রেজওয়ান ইসলাম রতন (১৯) ।
ছোট ছেলে মো: রেজওয়ান ইসলাম রতন মাদারীপুর শিবচর উপজেলার বাদশা মিয়ার মাদ্রাসায় মাওলানা লাইনে লেখাপড়া করতো। হাসিনা বেগমের নিকট আত্মীয় (১) জুয়েল শেখ (৩৭) ও (২) কালা শেখ (৪২) পিতা- মান্নান শেখ,(৩) বর্ষা (২৫) স্বামী সোহেল শেখ,(৪) শিউলী আক্তার শারমিন (২৮) স্বামী জুয়েল শেখ,সর্ব সাং মোল্লা কান্দি (থানার সামনে),উপজেলা রাজৈর,) জেলা-মাদারীপুর। (৫) সুইটি বেগম (২৫) স্বামী আমিনুল সাং বড় ভাটরা, মুকসুদপুর, (৬) সাবানা(৩৫) স্বামী ভাষানী ও (৭)) ভাষানী (৪২) পিতা-অজ্ঞাত জেলা-গাজীপুর। এরা সকলেই আদম ব্যবসার সাথে জড়িত বলে লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
উপরে উল্লেখিত চত্রুটি হাসিনা বেগমের সম্পর্কে নিকট আত্মীয়-স্বজন হওয়ায়, তার ছোট ছেলে মো: রেজওয়ান ইসলাম রতনকে ইতালী পাঠিয়ে ভালো বেতনের চাকুরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে বলে প্রলোভন দেখায়। এবং তাকে ইতালী পাঠাতে ২৬ লক্ষ টাকা লাগবে জানায়। চত্রুটি হাসিনা বেগমকে বলেন এখন ৮ লক্ষ টাকা দিতে হবে বাকী টাকা ইতালী পৌছানোর পরে দিতে হবে।
তাদের কথা মোতাবেক হাসিনা বেগম তার জলির পাড় নিজ বাড়ীতে স্থানীয় কয়েকজনকে স্বাক্ষী রেখে জুয়েল শেখ গংদের হাতে ২১-১০-২০২৪ইং তারিখে ৮ লক্ষ টাকা এবং ছেলের পাসপোর্ট তুলে দেন। টাকা হাতে পেয়ে চক্রটি ৩ মাসের মধ্যেই রেজওয়ান ইসলামকে ইতালী পাঠিয়ে দিবে বলে আশ্বস্ত করেন ।
পরবর্তীতে জুয়েল শেখ গংরা ২৮-০১-২০২৫ইং তারিখে রেজওয়ানকে ইতালী পাঠানোর উদ্দেশ্যে হাসিনার বাড়ীতে আসে এবং ২ লক্ষ টাকা দাবি করেন। হাসিনা বেগম তাদের কথা মোতাবেক সন্তানকে বিদেশে পাঠানোর স্বপ্নে স্থানিয় সাক্ষীদের উপস্থিতিতে পুনরায় আরো ২ লক্ষ টাকা প্রদান করেন।
এরপর মানব পাচারকারী আদম ব্যবসায়ী জুয়েল শেক গংরা রেজওয়ানকে বাড়ী হতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ইতালি না পাঠিয়ে লিবিয়া পাঠিয়ে বাকি টাকা না দিলে তাকে ইতালী পাঠানো সম্ভব হবে না বলে মা হাসিনা বেগমসহ তার পরিবারকে জানায়।
তখন হাসিনা বেগম ও তার পরিবার নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে জুয়েল গংদের ১৬ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। উক্ত টাকা পাওয়ার পরও জুয়েল গংরা রেজওয়ানকে ইতালি না পাঠিয়ে লিবিয়া জুয়েল গংগের সহযোগি মাফিয়া চত্রুের মাধ্যমে একটি ঘরে আটকে রেখে পুনরায় তারা ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। লিখিত বক্তব্য লাবনী আক্তার আরো জানান আজ কয়েক মাস যাবৎ হাসিনা বেগমের সন্তানের সাথে কোন যোগাযোগ নাই। রেজওয়ানের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা।
হাসিনা বেগম মুক্তিপনের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সন্তানকে ফেরত পেতে তাদের কাছে দাবি জানান। মানব পাচারকারী জুয়েল শেখ গংরা সন্তান ফেরতের ব্যাপারে হাসিনা বেগমকে কোন সমাধান না দিয়ে মুক্তিপনের টাকার জন্য বার বার চাপ দিতে থাকে।
নিরুপায় হাসিনা বেগম সন্তান ফিরে পেতে গত ২৯-০৫-২০২৫ইং তারিখে মুকসুদপুর থানায় (১)জুয়েল শেখ (৩৭) ও (২) কালা শেখ (৪২) পিতা- মান্নান শেখ,(৩) বর্ষা (২৫) স্বামী সোহেল শেখ,(৪) শিউলী আক্তার শারমিন (২৮) স্বামী জুয়েল শেখ,সর্ব সাং পশ্চিম রাজৈর উপজেলার মোল্লাকান্দি,জেলা- মাদারীপুর,(৫) সুইটি বেগম (২৫) স্বামী আমিনুল সাং বড় ভাটরা,মুকসুদপুর, (৬) সাবানা (৩৫) স্বামী ভাষানী ও (৭)) ভাষানী (৪২) পিতা-অজ্ঞাত,জেলা- গাজীপুর ৭জনকে আসামী করে মুকসুদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং জি আর-১৭৯/২৫।
সম্প্রতি ২৯জুন ভোর রাতে তাদের নিজবাড়ী হতে ১নং আসামী জুয়েল শেখ ও ২নং আসামী কালা শেখ পিতা-মান্নান শেখকে র্যাব-৮ আটক করে এবং বর্তমানে তারা গোপালগঞ্জ জেল হাজতে রয়েছে বলে জানা গেছে।
১৬ জুলাই-২০২৫ বেলা ১১টায় জলিরপাড় বাজারের নিজ বাড়ীতে হাসিনা বেগম সন্তান রেজওয়ান ইসলাম রতনকে ফিরে পেতে এবং মানব পাচারকারী আসামী জুয়েল শেখ গংদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিচার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লাবনী আক্তার আরো জানান,জুয়েল শেখ গংরা প্রকৃত পক্ষে একটি মানব পাচারকারী চক্র।
মুকসুদপুর থানার অধীনস্থ সিন্দিয়াঘাট পুলিশ ফাড়ির সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, উক্ত আসামীদ্বয় একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী দলের সত্রুিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন লোকজনদের উন্নত জীবন যাপনের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়া নিয়ে সহযোগী মাফিয়া চক্রের মাধ্যমে আটক করে মুক্তিপণ আদায় করাসহ মানব পাচার করে থাকে।
কে এম আবু বক্কার
সিনিয়র স্টাফ রিপোটার