কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে বাংলাদেশের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’

0
28
রেহানা মরিয়ম নূর
রেহানা মরিয়ম নূর

ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। তার পরিচালিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ স্থান পেয়েছে কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে। বাংলাদেশি কোনো ছবির এমন অর্জন এটাই প্রথম। ফলে এর পোস্টারে শোভা পাবে কানের সম্মানজনক লোগো।

‘রেহানা মরিয়ম নূর’ রয়েছে আঁ সার্তে রিগার্দ শাখায়। কানের প্রতিযোগিতা বিভাগের পরেই এটি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের কোনো ছবি এবারই প্রথম এতে জায়গা করে নিলো। অফিসিয়াল সিলেকশনে প্রথমবার উড়তে যাচ্ছে লাল-সবুজ পতাকা!

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ইউজিসি নর্ম্যান্ডি প্রেক্ষাগৃহে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় কান উৎসবের ৭৪তম আসরে নির্বাচিত ছবির তালিকা ঘোষণা করা হয়। এ আয়োজনে ছিলেন উৎসবের জেনারেল ডেলিগেট থিয়েরি ফ্রেমো ও সভাপতি পিয়েরে লেসকিউর। সংবাদ সম্মেলনটি সরাসরি দেখানো হয় কানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার ও ডেইলি মোশন অ্যাকাউন্টে।

‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন। তিনি বলেন, ‘এই অর্জন গোটা বাংলাদেশের।’

আয়োজকদের ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনন্দনে সিক্ত হচ্ছেন আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কী দারুণ খবর! ভালোবাসা রইলো সাদ।’ তার স্ট্যাটাস শেয়ার দিয়েছেন নির্মাতা আদনান আল রাজীব ও অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন।

আশফাক নিপুণের কথায়, ‘বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ও বাংলাদেশের জন্য কী অসাধারণ দিন! সাদ ও তার ছবির সদস্যদের জন্য অনেক অভিনন্দন। আপনারা আমাদের গর্বিত করেছেন।’

নূহাশ হুমায়ূন লিখেছেন, ‘বাংলা ভাষার ছবির জন্য এটি অবিস্মরণীয় খবর। এমন চমৎকার ব্যাপারের জন্য বাংলাদেশি হিসেবে গর্ব হচ্ছে।’

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের দ্বিতীয় ছবি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। এর চিত্রনাট্য ও সম্পাদনা তারই। প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের শিক্ষক রেহানা মরিয়ম নূরকে কেন্দ্র করেই এর গল্প। রেহানা একজন মা, মেয়ে, বোন ও শিক্ষক হিসেবে জটিল জীবনযাপন করে। এক সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বেরোনোর সময় রেহানা একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হয়। এরপর থেকে সে এক ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন এবং ক্রমে একরোখা হয়ে ওঠেন। কিন্তু একই সময়ে তার ৬ বছর বয়সী মেয়ের বিরুদ্ধে স্কুল থেকে রূঢ় আচরণের অভিযোগ ওঠে। এমন অবস্থায় অনড় রেহানা তথাকথিত নিয়মের বাইরে থেকে সেই ছাত্রী ও তাঁর সন্তানের জন্য ন্যায়বিচারের খোঁজ করতে থাকেন।

১ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট ব্যাপ্তির ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছেন সাবেরী আলম, আফিয়া জাহিন জায়মা, আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ, কাজী সামি হাসান, ইয়াসির আল হক, জোপারি লুই, ফারজানা বীথি, জাহেদ চৌধুরী মিঠু, খুশিয়ারা খুশবু অনি, অভ্রদিত চৌধুরী।

২০১৬ সালে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ ছিলো আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের প্রথম কাহিনিচিত্র। তার দ্বিতীয় ছবি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ তৈরি হয়েছে পোটোকল ও মেট্রো ভিডিওর ব্যানারে। এটি প্রযোজনা করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমি চুয়া। ছবিটি সহ-প্রযোজনা করেছে সেন্সমেকারস প্রডাকশন। নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে এহসানুল হক বাবু এবং সহ-প্রযোজনায় আছেন রাজীব মহাজন, আদনান হাবিব ও সাঈদুল হক খন্দকার। ছবিটির চিত্রগ্রহণ করেছেন তুহিন তমিজুল। এছাড়া পোশাক পরিকল্পনায় নাবিলা হক, শিল্প নির্দেশনায় মাসুম মেহেদি ও সাউন্ড ডিজাইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শৈব তালুকদার।

রাজীব মহাজন জানিয়েছেন, ছবিটির আন্তর্জাতিক পরিবেশনার জন্য পরিচালক-প্রযোজকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে জার্মান ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফিল্মস বুটিক।

২০০২ সালের ৫৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্যারালাল বিভাগ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটে নির্বাচিত হয় প্রয়াত নির্মাতা তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’। একই আসরে আরও ছিল রোমানিয়ার ক্রিশ্চিয়ান মুঙ্গিউর ‘অক্সিডেন্ট’, ইতালির মাত্তেও গ্যারোনের ‘দ্য এমবালমার’, চাঁদের মামাত সালাহ হারুনের ‘অ্যাবুনা’, স্কটল্যান্ডের লিন রামসের ‘মরভার্ন ক্যালার’, অ্যান্থনি ও জো রুশোর ‘ওয়েলকাম টু কলিনউড’ প্রভৃতি। এসব ছবির মধ্যেও ২০০২ সালে ফিপরেস্কিতে সেরা চলচ্চিত্র হয়েছে ‘মাটির ময়না’। কানে বাংলাদেশের পাওয়া একমাত্র পুরস্কার এটাই।

দক্ষিণ ফ্রান্সের সাগরপাড়ের শহর কানের পালে দে ফেস্টিভাল ভবনে আগামী ৬ জুলাই উৎসবের পর্দা উঠবে। সাধারণত ভবনটির সাল দুবুসি প্রেক্ষাগৃহে আঁ সার্তে রিগার্দ বিভাগের ছবিগুলোর প্রদর্শনী হয়ে থাকে। আগামী ১৭ জুলাই সমাপনী আয়োজনে স্বর্ণ পাম বিজয়ী ছবির নাম ঘোষণা করবেন বিচারকদের সভাপতি স্পাইক লি।