
মহামারী করোনায় গতকাল ১৬ এপ্রিল ২৪ ঘণ্টায় দেশে মারা গেছেন ১০১ জন। প্রায় প্রতিদিনই আগের দিনের মৃত্যুকে ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। দেশে অধিকাংশ মানুষ মুসলমান হওয়ায় মৃতদের কবর দেওয়া হচ্ছে। আর প্রতিদিন সারি সারি কবর খুঁড়তে খুঁড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন রাজধানীর দুই সিটিসহ সারা দেশের গোরখোদকরা।
জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির একের পর এক লাশ আসছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) রায়েরবাজার কবরস্থানে। ফলে কবর খোঁড়ার পর বিশ্রাম পাচ্ছেন না এখানে দায়িত্বরত কবরখোদকরা। একদিকে কবর খুঁড়ছেন, অন্যদিকে লাশ দাফন হচ্ছে। রায়ের বাজার কবরস্থান ছাড়াও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্যান্য কবরস্থানগুলোতে প্রতিদিন অর্ধশতের ওপরে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা হচ্ছে। এর বাইরেও স্বাভাবিকভাবে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েইে চলেছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ায় মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে ঢাকায় যাদের মৃত্যু হচ্ছে তাদের লাশ দাফন হচ্ছে দুই সিটির কবরস্থানগুলোতেই। এসব কবরস্থানে প্রতিনিয়ত আসছে লাশ। একের পর এক লাশ দেখে অবাক হচ্ছেন গোরখোদকরা। আগে কখনো এত লাশ একসঙ্গে দেখেননি তারা। আর এত কবরও খুঁড়তে হয়নি তাদের।
দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ১০টি সরকারি কবরস্থান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, আজিমপুর কবরস্থান, জুরাইন কবরস্থান, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, বনানী কবরস্থান, খিলগাঁও কবরস্থান, রায়েরবাজার কবরস্থান, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর ও ১২ নম্বর সেক্টরে রয়েছে দুটি কবরস্থান। এ ছাড়া ধলপুর কবরস্থান ও মুরাদপুর শিশু কবরস্থান নামে আরও দুটি কবরস্থান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনার মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন হচ্ছে ডিএনসিসির রায়েরবাজার কবরস্থানে।
মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে কবর খুঁড়ছেন রায়েরবাজার কবরস্থানে। এ কবরস্থানের এক পাশে একাই কাজ করছেন তিনি। একদিকে মরদেহ দাফন হচ্ছে অপরদিকে কবর খুঁড়ে চলছেন তিনি। এভাবে একের পর এক কবর খোঁড়ায় দিশাহারা হয়ে পড়ছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরে এই কবরস্থানে কবর খুঁড়ছি।
আগে কখনো একসঙ্গে এত লাশ দাফন করতে দেখিনি। একদিকে খুঁড়ে শেষ করছি, আরেক দিকে দেখছি লাশ দাফন হচ্ছে। আর এসব মৃত ব্যক্তি সবাই করোনা রোগী। তিনি বলেন, চারপাশে যত কবর রয়েছে এগুলো সব করোনা রোগীর। এখানে শুধু করোনা রোগীদের দাফন করা হচ্ছে। গত কদিনে পুরোটা ভরে গেছে। নতুন নতুন লাইনে কবর খুঁড়ছি আর করোনা রোগীর লাশ দাফন করা হচ্ছে।
রায়েরবাজার কবরস্থানে দেখা যায়, করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত অংশে দাফন শেষ করে চলে যাচ্ছিল একটি অ্যাম্বুলেন্স। মৃতদেহের সঙ্গে ছিলেন মাত্র দুজন মানুষ। আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে সারি সারি অসংখ্য কবর খুঁড়ে রাখা রয়েছে। এর মধ্যে এক পাশ থেকে লাইন ধরে কয়েকটি কবর দেওয়া হয়েছে। শেষ লাইনের শুরু থেকে চারটি কবর ছিল একেবারেই নতুন। মাটি দেখেই বুঝা যাচ্ছিল একটু আগেই এখানে লাশ দাফন হয়েছে।