সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে ওমিক্রন!

0
45
সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে ওমিক্রন!
সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে ওমিক্রন!

সারাদেশে আগামী তিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিরাময় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন।

একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে তিনি জানান, এখনও মানুষ ডেলটা ভ্যারিয়েন্টেই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু ওমিক্রনের সংক্রমণ শক্তি বেশি হওয়ায় আরও বেশি সংখ্যক লোক আক্রান্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী সাতদিনের মধ্যেই বিধিনিষেধ জারি করার জন্য সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকারের এসব ঘোষণা এলো।

সাত দিনের মধ্যে বিধিনিষেধ:
গতকাল মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ওমিক্রন সংক্রমণের হার বিবেচনা করে জরুরি কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করার জন্য সুপারিশ করেছেন আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সদস্যরা। সেটা সাত দিনের মধ্যেই জারি করার তাগিদ দিয়েছেন।

এর আগে সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ আসবে। তবে মঙ্গলবার তিনি সচিবালয়ে সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মিটিংয়ে ১৫ দিনের মধ্যে বিধিনিষেধ কার্যকর করার কথা হয়েছিল। কিন্তু ১৫ দিন আসলে অনেক বেশি। এ সময়ের মধ্যে রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই আমরা মঙ্গলবার বলেছি, সাত দিনের মধ্যে বিধিনিষেধ প্রয়োগ করতে হবে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিরাময় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেনও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, আমাদের দেশের ক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে দেশ বা আমাদের সাউথ এশিয়ান অঞ্চলে এখন পর্যন্ত ওমিক্রন সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু যেহেতু আমাদের দেশে ট্রাভেল আছে অনেক (অনেক মানুষ যাতায়াত করেন), তাই বন্দরে স্ত্রিনিং করে এটা আটকানো কঠিন।

ভাইরাসটির পরিবর্তন হচ্ছে জানিয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশে এরমধ্যেই ১০ জনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। যেকোনো সময় এটা বেড়ে যেতে পারে।

বিশ্বব্যাপী তথ্য-উপাত্ত এবং ওমিক্রণ ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার ক্ষমতা, দুটি মিলিয়ে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, আগামী তিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে হয়তো ওমিক্রন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আলমগীর হোসেন বলেন, এখন আমরা পাচ্ছি একটা দুইটা করে। কিন্তু আলটিমেটলি হয়তো আমরা আগামী তিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে দেখব, ব্যাপক করোনা রোগী ওমিক্রনে আক্রান্ত।

ওমিক্রন বাড়লেও হাসপাতালে ভর্তির হার হবে কম:

তবে ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়লেও তাদের সবাইকে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না বলে এ বিজ্ঞানী ধারণা করছেন। তিনি বলেন, গ্লোবাল তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা আশা করছি, ওমিক্রনে (আক্রান্ত হলেও) হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা কম হবে। এখন পর্যন্ত ডেলটা ধরনের করোনা সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওমিক্রন সংক্রমণের হার পর্যালোচনা করে এ বিজ্ঞানী জানান, অন্যান্য দেশে ওমিক্রনের মৃদু সংক্রমণ হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা মৃত্যুর হার কম। কিন্তু একই সময়ে যদি অনেক বেশি রোগী হয়, সেটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরও ব্যাপক চাপ তৈরি করবে।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলছেন, আমরা এরকম মৃদু পেশেন্টের ক্ষেত্রে হোম আইসোলেশনের কথা বলি। কিন্তু বাংলাদেশে সব মানুষের ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই যে, বাসায় আইসোলেশনে থাকবে।

তিনি বলেন, আরেকটি কথা হলো, ভাইরাস যতো মৃদু হোক না কেন, যাদের বয়স বেশি, যাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ আছে, তাদের জন্য কিন্তু যেকোনো মৃদু ভাইরাস বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে। এজন্য বয়োজ্যেষ্ঠ এবং যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, ওমিক্রন যেন তাদের আক্রমণ করতে না পারে, সেজন্য তাদের অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যতোই মৃদু হোক না কেন, এটা তাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে।

যেসব পদক্ষেপ নিতে বললেন এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা:

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওমিক্রন বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেসব সুপারিশ করেছে, তার মধ্যে যানবাহনে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন, ঘরে-বাইরে মাস্ক পরা এবং সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিত করার মতো পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি