একাই ৭৬ পদের দায়িত্ব পালন করছেন রামেক অধ্যাপক

0
34
৭৬ পদের দায়িত্বে একজন অধ্যাপক

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. জাওয়াদুল হক রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) সাতটি গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পালনসহ অবৈধভাবে ৬৯টি পরিদর্শন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের এই শিক্ষক সম্প্রতি আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। এই পরিচয়কে পুঁজি করেই তিনি রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (রামেবি) অনিয়ম-দুর্নীতির রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক মাসুম হাবিরের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে রামেবি’র সবকাজেই সর্বদা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকেন তিনি।

সূত্র জানায়, অধ্যাপক ডা. জাওয়াদুল হক রামেবি’র প্রিভেনটিভ এন্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন, সিন্ডিকেট সদস্য, নিয়োগ কমিটির সদস্য, সংবিধি কমিটির আহ্বায়ক, ক্রয় কমিটির আহ্বায়কও। এছাড়াও কলেজ পরিদর্শক এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন এই চিকিৎসক। শুধু তাই নয়, বিধি লঙ্ঘন করে রামেবি’র অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের ৬৯টি কমিটির আহবায়কও হয়েছেন তিনি। এছাড়া তিনি একাধারে রামেবি’র অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্র ভিজিলেন্স টিমের সদস্য, নিয়োগ ও পদন্নোতি বোর্ডের আহ্বায়ক/সদস্য, প্রশ্নপত্র সেটার-মডারেটরসহ আর্থিক সুবিধা সংশ্লিষ্ট সব কমিটিতেই থাকেন।

সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি মিলে ৫৮টি মেডিকেল প্রতিষ্ঠান রামেবির অধিভুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্তি নবায়ন ও পরীক্ষা কেন্দ্র প্রদানে প্রতি শিক্ষাবর্ষে পরিদর্শন কমিটি গঠিত হয়। রামেবি’র নিজস্ব সংবিধি না থাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সংবিধি অনুযায়ী অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও পরীক্ষা গ্রহণসহ সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ওই সংবিধি অনুযায়ী কলেজ পরিদর্শক বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের প্রাথমিক অধিভুক্তি, অধিভুক্তি নবায়ন বা কেন্দ্র প্রদান সংক্রান্ত কোনও পরিদর্শন কমিটিতে আহবায়ক হওয়ার সুযোগ নেই। আর অধ্যাপক পদ মর্যাদার একজন চিকিৎসক আহবায়ক বা সদস্য যে যেটাই হোন একটি শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ ৪টি কলেজ পরিদর্শনে যেতে পারবেন। কিন্তু ডা. জাওয়াদুল হক ওই বিধির তোয়াক্কা না করে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে-ই রামেবির সকল পরিদর্শন কমিটির আহবায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামেবির একাধিক সূত্র জানায়, ডা. জাওয়াদুল হকের জামাত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও রয়েছে। তিনি নিয়োগ কমিটির সদস্য হওয়ার সুবাদে প্রথম নিয়োগেই অফিস সহায়ক পদে একজন জামায়াত সমর্থকের ছেলেকে চাকরি দিয়েছেন। অতি সম্প্রতি একজন ড্রাইভার নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) পদেও তার পরিচিত একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন ডা. জাওয়াদুল হক।

এ বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের রাজশাহী জেলার সভাপতি অধ্যাপক ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, রামেবি অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজগুলোতে স্বাচিপ সমর্থিত শত শত অধ্যাপক রয়েছেন। তাদের সরাসরি উপেক্ষা কিংবা পাশ কাটিয়ে চলছেন রামেবি ভিসি। শুধু তাই নয়, কট্টর জামায়াতের অনুসারী এবং আত্মীয়-স্বজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে ভিসি রামেবিতে স্বাধীনতা বিরোধী বলয় গড়ে তুলেছেন।

বিএমএ রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. নওশাদ আলী বলেন, রামেবির ৮জন ডিনের কাউকেই ভিসি যোগ্য মনে করেন না। অজ্ঞাত কারণে ওই একজনকে দিয়ে ভিসি রামেবির নিয়োগ, বাছাই, পরীক্ষা, সকল পরিদর্শন, সকল সিলেকশন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, কলেজ পরিদর্শক, কেন্দ্র প্রধান, অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান অ্যাফেলিয়েশন সহ সমস্ত কর্মকাণ্ড করাচ্ছেন।

এ বিষয়ে মতামতের জন্য রামেবির ভিসি অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিবের সাথে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত অধ্যাপক ডা. জাওয়াদুল হকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাতটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগগুলো আসলে সঠিক নয়। ডিনের একটি আমার মূল পদ। বাকিগুলোর অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছি আমি। ভাইস চ্যান্সেলর আমাকে যোগ্য মনে করেই দায়িত্বগুলো দিয়েছেন, তাই আমি তা পালন করছি।

৬৯টি পরিদর্শন কমিটির আহবায়ক হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, সংখ্যাটা আসলে ওরকম নয়। একেকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একেকটি কমিটি থাকে। কলেজ পরিদর্শক প্রত্যেকটি কমিটির সদস্য সচিব থাকতে পারেন বলেও দাবি করেন তিনি।