সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নিকটবর্তী নিমতা গ্রামে। তার পৈতৃক নিবাস বর্ধমানের চুপী গ্রামে। পিতা রজনীনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং পিতামহ অক্ষয় কুমার দত্ত ছিলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক।
সত্যেন্দ্রনাথের কবিতায় নানা ভাষার শব্দ নিপুণ ছন্দে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া, তিনি বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদকর্মও করেছেন। তার কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষা যথোপযুক্ত ব্যবহারের কৃতিত্বের জন্য তাকে ছন্দের জাদুকর নামে আখ্যায়িত করা হয়।
কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করার আগে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পিতার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতী পত্রিকাগোষ্ঠীর অন্যতম কবি। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফার্সি শব্দের সমন্বিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই।
অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান। নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর প্রভৃতি ছদ্মনামে তিনি কবিতা লিখতেন। দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তার কবিতার বিষয়বস্তু।
১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ছন্দ সম্পর্কিত তার প্রসিদ্ধ রচনা ‘ছন্দ-সরস্বতী’ প্রকাশিত হয়।
তার অপর কৃতিত্ব বিদেশি কবিতার সফল অনুবাদ। তিনি আরবি-ফার্সি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে বাংলাসাহিত্যের বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি সাধন করেন। অবহেলিত সাধারণ মানুষদের নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন। তিনি একাধিক ছদ্মনামে কবিতা চর্চা করতেন।
তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সবিতা, সন্ধিক্ষণ, বেণু ও বীণা, হোমশিখা, ফুলের ফসল, কুহু ও কেকা, তুলির লিখন, মনিমঞ্জুষা, অভ্র-আবীর, হসন্তিকা, বেলা শেষের গান, বিদায় আরতি। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সত্যেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন-
“তুমি বঙ্গভারতীর তন্ত্রী-‘পরে একটি অপূর্ব তন্ত্র এসেছিলে পরাবার তরে এ শুধু প্রিয়জনের প্রশংসা নয়, এ এক ঐতিহাসিক সত্য।”