আজ শনিবার (২৯ অক্টোবর) রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হবে নগরীর কালেক্টরেট মাঠে। এই গণসমাবেশের একদিন আগে রংপুর জেলায় গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। জেলা মোটর মালিক সমিতির ডাকা এই ধর্মঘট চলবে আজ সমাবেশের দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
গতকাল সকাল থেকে কোনো বাস রংপুর ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বাস না পেয়ে অনেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এদিকে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আগে ভাগেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেছেন বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। বাস বন্ধ থাকায় বিকল্প উপায়ে রংপুরে আসছেন তারা। কেউ মাইলের পর মাইল হেঁটে, কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, অটোরিকশা কিংবা মোটরসাইকেলে করে সমাবেশস্থলে আসছেন।
দ্রব্যমূল্য, লোডশেডিং, দুর্নীতি, লুটপাট, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ নয়টি দাবিতে এই সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছে তারা। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর রংপুরের বিভিন্ন অলিগলিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের সরব অবস্থান দেখা যায়।
বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের কারও হাতে কাঁথা-বালিশ, কারও হাতে শুকনো খাবার, আবার কারও হাতে প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশস্থলে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। রাতেই মাঠসহ রংপুর শহর লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে সংশ্লিষ্টরা। গণপরিবহন বন্ধ রেখে শহরের ঢোকার পথে বিভিন্ন পয়েন্টে বাধা দিচ্ছেন সরকার দলের নেতাকর্মীরা। তবে, কোনো বাধাই এই সমাবেশের জনসমাগম ঠেকাতে পারছে না।
সমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘সরকার আমাদের সমাবেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। পরিবহন ধর্মঘটের নামে দেশের মানুষকে হয়রানি করছে।’
‘কোন বাধা আমাদের সমাবেশ ঠেকাতে পারবে না’ উল্লেখ করে দুলু বলেন, ‘মানুষ যে যেভাবে পারছে, সমাবেশে আসছে। দেশের মানুষ তাদের দাবি আদায়ের জন্য এই সমাবেশে তারা যোগ দিচ্ছে।’
সমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সরকার গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় এখন আমাদের সমাবেশ ২ দিন হচ্ছে। শুক্রবার থেকেই সমাবেশ শুরু হয়ে গেছে।’ এ সময় তিনি কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক ও দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। সরকার আমাদের স্বাভাবিকভাবে সমাবেশ সফল করতে দেবে না। আমরা আমাদের মতো করে প্রস্ততি নিয়েছি। গত রাতেই রংপুর শহর লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে।’
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় সব বিভাগে গণসমাবেশের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথম কর্মসূচি পালন করে। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে। সর্বশেষ ২২ অক্টোবর খুলনায় গণসমাবেশ করে বিএনপি।
এরপর আজ রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির তৃতীয় ধাপের কর্মসূচি শেষ হবে।
এদিকে এরইমধ্যে গণসমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, প্রধান বক্তা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু রংপুরে পৌঁছেছেন।