আজ ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফাভিত্তিক গণ-আন্দোলনের আদর্শকে ধারণ করে অগ্রসরমান সংগ্রামের পথপরিক্রমায় ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন ও ১১-দফা দাবি ঘোষণা করেন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ ও বঞ্চনা থেকে বাঙালিকে মুক্ত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন।
এতে স্বাধিকার আন্দোলনের গতি তীব্রতর হলে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে। এর বিরুদ্ধে ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-জনতার দেশব্যাপী দুর্বার ও স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন শুরু হয়।
এক পর্যায়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি ঢাকায় হরতালের ডাক দেয়। এই হরতাল চলাকালে সচিবালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে বকশীবাজার নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান রাজপথের চার সঙ্গীর সঙ্গে শহীদ হন।
এর আগে ২০ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে আসাদুজ্জামান আসাদ শহীদ হওয়ায় গোটা পূর্ব পাকিস্তান এমনিতেই বিক্ষোভে তেঁতে ছিল। ২৪ জানুয়ারি মতিউরদের আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন দুর্বার গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
ডাকসুর তৎকালীন ভিপি ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ছাত্রসমাজের পাশাপাশি রাজপথে নামে বিক্ষুব্ধ বাঙালি। অবশেষে গণঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুসহ রাজবন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও পদত্যাগে বাধ্য হন।
এরই ধারাবাহিকতায় ’৭০-এর নির্বাচনে বাঙালির অবিস্মরণীয় বিজয়, ’৭১-এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের গণহত্যা ও ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার পথ ধরে তাঁর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যায়। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনসহ তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন তারা।
এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন আজ সকালে নবকুমার ইনস্টিটিউটে শহীদ মতিউর রহমান স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।